• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষক ছাত্রীকে বললেন, তোর গর্ভের সন্তান যেন প্রতিবন্ধী হয়!


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
শিক্ষক ছাত্রীকে বললেন, তোর গর্ভের সন্তান যেন প্রতিবন্ধী হয়!

সাতক্ষীরায় অকথ্য ভাষায় শিক্ষার্থী গালিগালাজ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর ও মামলার অভিযোগে উঠেছে নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর রোববার শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আটকে রেখে মারধর করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কবির হোসেন। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ক্লাস শুরু হওয়ার পরে শিক্ষক শাহিনা পারভীন, নাজমা সুলতানা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।

নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা সুলতানা হাবিবা বলেন, “ক্লাসে মিষ্টি ম্যাডাম আমাকে ডেকে বলছে ‘আল্লাহর ওপর থেকে তোর গজব পড়বে, তুই আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বললি কেন, বলেছিস কেন আমি তোকে মারিছি’। তখন আমি বললাম ম্যাডাম আপনি মেরেছেন বলেই তো আমি বলেছি। তখন ম্যাডাম বলছে ‘আমি তোর কোথায় মেরেছিলাম।’ তখন আমি বললাম ম্যাডাম আপনি তো গণ্ডগোলের দিন আমাদের মেরেছিলেন। তখন ম্যাডাম আমাকে বলে ‘তুই তো একটা ঘরের মেয়ে, আর আমরা তো তোকে মারিনি, তুই যখন মিথ্যা কথা বলছিস এই মার তোর শশুর বাড়ি গিয়ে খেতে হবে। তোর গর্ভেও তো সন্তান হবে, সে যেন প্রতিবন্ধী হয়। তোর বাপ তো ভ্যান চালায়, আমি তো জানি। তোর বাপের নামে ৫ লাখ টাকার মামলা দেব।”

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ইভা বলেন, “কালকে আমি স্কুলে গিয়েছি। আমি জানতামই না ম্যাডামরা আমাকে এভাবে বলবে। প্রথমে ক্লাসে যাওয়ার পরপরই তুহিন স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘তুমি কি এর ভেতরে ছিলে’। আমি বললাম না স্যার আমি এর ভেতরে ছিলাম না। তখন তুহিন স্যার বলল ‘তুমি তো এর মধ্যে ছিলে। মিথ্যা কথা বললে কিন্তু পরে সমস্যা হতে পারে।’ ঠিক তখনই ওই ক্লাসে আসেন মিষ্টি ম্যাম, কবির স্যার ও নাজমা ম্যাডাম। তখন আমাকে মিষ্টি ম্যাডাম বলে ‘এই বেয়াদব মেয়ে আমার ক্লাসের কোনো মেয়ে কি আন্দোলনের দিন নিচে নেমেছিল? তুই নেমেছিলে কেন বল বেয়াদব মেয়ে? তোর বাড়ি কোথায়? কাজী পাড়ায় না? সুলতানপুরের মেয়ে বলে শুধু তুই সত্য কথা বলিস, আর সবাই মিথ্যা বলে তাই না? কাজী পাড়ায় বাড়ি বলে রাসেল স্যারের সঙ্গে ফস্টি নস্টি করিস তাই না?”

ইশারাত জাহান বলেন, “আমাকে বাইরে নিয়ে যায় এবং বলে যে, ‘আমি তোকে অভিশাপ দেব না। কিন্তু তোর গর্ভের সন্তান কালো হবে, কালা হবে, খোঁড়া হবে, প্রতিবন্ধী হবে। তোর বাপ মরে গেছে না? মরে যেয়ে ভালো কাজ করেছে। আমরা মারিনি তারপরেও আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছিস না? এখন তোকে রাস্তাঘাটে যে জায়গায় ফাঁকা পাব সেইখানে সত্যি সত্যি সেইভাবে মারব।’ নাজমা ম্যাডামের কাছে বিজ্ঞান খাতা দেখাতে চাইলে বলে যে, ‘তোর খাতা দেখব না, তোরা কী করে পরীক্ষায় পাশ করিস দেখে নেব। ভালো পরীক্ষা দিলেও পাশ করাব না।”

এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কেউ রাজি হননি।  

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!