গাজীপুর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এই পর্ব শুরু হবে। তিন দিনব্যাপী এ ইজতেমা আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি)।
আয়োজকদের দাবি, দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমায় প্রায় ১২ হাজারের বেশি-বিদেশি মুসল্লিদের সমাগম হবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা শুরুর এক দিন আগেই দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বিদেশি মুসল্লির সমাগম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে তুরাগ নদী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে যোগ দিতে ইজতেমায় আসছেন মুসল্লিরা। এসময় কারও হাতে ব্যাগ, কারও মাথায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চোখে পড়ে। যেসব মুসল্লিরা ইজতেমায় আসছেন তারা জামায়াতের মাধ্যমে মাঠের নির্ধারিত খিত্তা বা জায়গায় অবস্থান নিচ্ছেন। যেসব মুসল্লিরা তাদের জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না, তারা নকশা দেখে বা দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করছেন।
এদিকে ইজতেমার ময়দানে আসা মুসল্লিদের রান্না ও খাওয়ার চিত্রও চোখে পড়ে।
প্রথম পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুবায়েরপন্থীদের আয়োজনে। পরে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাঠ বুঝে নেন সাদপন্থীরা। অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাদপন্থীদের আয়োজনে।
এদিকে সাদপন্থী ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্রবারের ফজরের নামাজের পর প্রথম দিনের প্রথম বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ এবং বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। এরপর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শনিবারের (১০ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর প্রথম বয়ান করবেন মাওলানা সাঈদ বিন সাদ এবং বাংলা তরজমা করবেন মুফতি ওসামা ইসলাম। আর শেষ দিন রোববারের (১১ ফেব্রুয়ারি) ফজরের বয়ান করবেন মুফতি মাকসুদ এবং বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আব্দুল্লাহ।
আয়োজক কমিটির সূত্র ইজতেমা চলাকালীন সময়ে নামাজের সময়সূচি উল্লেখ করে জানিয়েছে, ফজর নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ৬টায়, জোহর ২টায়, আসর সাড়ে ৪টায়, মাগরিব ওয়াক্ত মতে এবং এশার নামাজ বয়ানের পরে তশকিল শেষে আজানের আধা ঘণ্টা পর অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে দুপুর দেড়টায়। জুমার নামাজের ইমামতি করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ সাহেব।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, মাঠের নিরাপত্তা বজায় ও রাস্তার যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খাগরাছড়ি থেকে আসা বাশার নামের এক মুসল্লি বলেন, “ইজতেমার পরিবেশ অনেক চমৎকার মনে হচ্ছে। বুধবার এসেছি। এসে নিজের স্থানে ছিলাম। শুক্রবার শুরু হবে। এর আগেও এসেছি অনেক কয়েকবার। পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করবেন।”
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা নাসির উদ্দীন বলেন, “আমি এর আগেও এসেছি। গতবারের থেকে এবারের পরিবেশ অনেক ভালো মনে হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। মুসল্লিরা এবার নির্বিঘ্নে ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন।”
সাদপন্থী ইজতেমা আয়োজক কমিটির সমন্বায়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, “বিশ্বের প্রায় অর্ধশতাধিক দেশ থেকে মুসল্লিরা এবার এসেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজারের বেশি মুসল্লি এসেছেন। আমরা প্রত্যাশা করছি, এবারের বিদেশি মুসল্লির সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) করা অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, “প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও পুলিশ সদস্যের সংখ্যা পর্যাপ্ত থাকবেন। তারা ময়দান ও তার আশপাশে এলাকায় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজে নিয়োজিত থাকবেন। শুধু তাই নয় পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ সড়কে যানজটের নিরসনে কাজ করবেন।”