• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বাজারে পণ্যের বাড়লেও আমাদের পরিশ্রমের দাম বাড়ে না’


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ১০:৩৭ এএম
‘বাজারে পণ্যের বাড়লেও আমাদের পরিশ্রমের দাম বাড়ে না’

গোপালগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। বেসরকারি একটি  ক্লিনিকে নার্সের চাকরি করেন তিনি। এই আয় দিয়েই তিন সদস্যের একটি পরিবার চালান। গত তিন দিন ধরে ছেলে গরুর মাংসের বায়না ধরেছেন। তাই তো গোপালগঞ্জ বড় বাজারে এসেছেন গরুর মাংস কিনতে। কয়েক দফায় দাম বাড়ার পর আর গরুর মাংস খাওয়া হয়নি তাদের। বাজারে এসে দেখেন মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। বাকি বাজারের হিসাব মেলাতে হলে এতো টাকা দিয়ে এক কেজি মাংস কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তো ৫০০ গ্রাম মাংস কিনলেন মরিয়ম। তাও ৪০০ টাকা দিয়ে।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকালে গোপালগঞ্জ বড় বাজারে কথা হয় মরিয়ম বেগমের সঙ্গে। এ সময় তিনি সংবাদ প্রকাশকে জানান, আগে দুই থেকে তিন কেজি করে মাংস কিনতেন পরিবারের জন্য। কিন্তু বর্তমানে সব নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলের চাহিদা মেটাতে গরুর মাংস কিনতে গিয়ে মাথায় হাত উঠেছে তার।

মরিয়ম বলেন, “বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের পরিশ্রমের দাম বাড়ে না। আমাদের বেতন বাড়ে না। এই দিকে কারও কোনো নজর নেই। এক কেজি মাংস যদি ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয় তাহলে এই আয় দিয়ে  আমরা তা কীভাবে কিনে খাব। শুধু মাংস নয়, সবকিছুর দাম চড়া। সব কিছু দিন দিন আমাদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

মরিয়ম আরও বলেন, “দুর্ভিক্ষ না হলেও দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তা দুর্ভিক্ষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।”

এ সময় কথা হয় দিনমজুর রফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে কোনোরকম চলে তার সংসার। কোরবানির পরে আর তার মাংস খাওয়া হয়নি। রমজান উপলক্ষ্যে এসেছেন মাংস কিনতে।

এসময় রফিক মিয়া বলেন, “রমজান উপলক্ষ্যে এসেছিলাম মাংস কিনতে।  কিন্তু এসে দেখি অনেক দাম। মাংস কিনতে গেলে অন্য বাজার কিনতে পারব না। তাই ৪০০ টাকা দিয়ে ৫০০ গ্রাম মাংস কিনেছি।”

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নাসির শেখ বলেন বলেন, “এখন গরুর সংখ্যা কমে গেছে। ইন্ডিয়া থেকে গরু আসাও বন্ধ। গোখাদ্যের দামও বেশি। যে কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে আমরা ৭৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছি। রমজান উপলক্ষ্যে ক্রেতার সংখ্যা ভালোই পাওয়া যাচ্ছে।”

আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মরিয়ম বেগম, রফিক মিয়ার  মতো অনেক ক্রেতারই একই অবস্থা। কেউই এক কেজি গরুর মাংস কেনার সাহস পাচ্ছেন না। সবাই মুরগির দোকানে ভিড় করছেন। কিন্তু এখানে এসেও তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। গত এক মাস ধরে হু হু করে বাড়ছিল ব্রয়লার মুরগির দাম। রমজানের শুরুতে কিছুটা কমলেও গত দুই দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে বেড়েছে ৩৫- ৪০ টাকা। ২১০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে আজ। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৭৫-১৮৫ টাকা কেজি দরে। লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক মুরগি ৩৮৫ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি কিনতে আসা রিজাউল ইসলাম বলেন, “রমজানের শুরুতে দাম কমার পর দুই দিন আগেও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৭৫-১৮০ কেজি দরে। আজ এসে শুনি ২১০ টাকা কেজি। দামের কারণে এমনিতেই গরুর মাংস ছোঁয়া যায় না। এখন মুরগিও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

মুরগী ব্যবসায়ী শুভ বলেন, “এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে একটু লাভে বিক্রি করি। দুই দিন আগেও আমরা ১৭৫-১৮০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করছি। এখন আমাদের একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। হঠাৎ দাম একটু বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ও বিক্রি কম হচ্ছে। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গেও মাঝে মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।”

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও এই মাংস ছিল ৫৫০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়। কিছুদিন আগেও ছিল ৯৫০ টাকা ।

ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। যা দুইদিন আগেও ছিল ১৭৫-১৮০ টাকা। লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক মুরগি ৩৮৫ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে কেজি প্রতি তেলাপিয়া মাছ ১৬৫ টাকা, পাঙাস ১৮৫ টাকা, শিং ৫৫০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ টাকা, কই মাছ ৩৫০ টাকা, রুই মাছ ৩২০ টাকা, কাতলা ৩৫০ টাকা, ইলিশ এক হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মাংস থেকে পিছিয়ে নেই কাচা বাজারও, প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, বেগুন ৫৫ টাকা, গাজর ১২০  টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা লেবু ৪০ টাকা হালি, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো শামিম হাসান বলেন, “রমজানের প্রতিদিনই আমরা বাজার মনিটরিং করছি। রমজান উপলক্ষ্যে কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বেশি নিয়েছে তা নিয়ে যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

Link copied!