আমিষের চাহিদা পূরণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম স্বল্প আয়ের মানুষের দারুণ পছন্দ। তবে বাজারে এই দুটি পণ্যের দামও বাড়তে শুরু করেছে লাগামহীনভাবে।
সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা এবং প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে তালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের এই পছন্দের খাবার দুটি।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নওগাঁ থেকে এক হালি (চারটি) ডিম কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ উদ্দিন। রিয়াজ উদ্দিন জানান, দাম বাড়ার কারণে এক ডজন না কিনে ৫৫ টাকায় তিনি এক হালি কিনেছেন। শুধু ডিম নয়, খরচ বাঁচাতে অন্য জিনিসের ক্ষেত্রেও এভাবে কাটছাঁট করছেন।
জেলার মান্দা উপজেলার গোপালপুর বাজারের ব্রয়লার হাউজ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে এক কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন এম এ রাজ্জাক ।
রাজ্জাক বলেন, “এক সপ্তাহ আগেও দেড়শ টাকার মধ্যে ব্রয়লার কিনতে পেরেছি। এরই মধ্যে দেশে এমন কি ঘটনা ঘটল যে, কেজিতে ৪০ টাকা বাড়াতে হবে?”
নাহিদ নামের এক বিক্রয়কর্মী জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে মুরগি আনতে তাদের গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। মুরগির খাদ্যের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া অনেক সময় মুরগি মরে যায়। সব মিলিয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারিতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা। আর চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ২০০ টাকা। টিসিবির হিসাবে ১১ দিনে মুরগির দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।
এ ছাড়া সোনালি জাতের মুরগির দামও বাড়তি। ১০ দিন আগে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া এই জাতের মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
দেশের ইতিহাসে ডিমের ডজন কখনোই দেড়শ টাকা স্পর্শ করেনি। ‘গরিবের মাংস’ খ্যাত এই খাদ্যপণ্যটির প্রতি ডজন কিনতে এখন এলাকাভেদে ক্রেতার খরচ পড়ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে এক হালি কিনলে রাখা হচ্ছে ৫৫ টাকা। টিসিবির তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ আগেও ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যেত ১২০ থেকে ১২৬ টাকায়। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
নওগাঁর ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদনকারী সারোয়ার জাহান বলেন, “মুরগি পালনে মোট খরচের ৭৫ শতাংশই হয় খাবারের পেছনে। সম্প্রতি খাবারের দাম আরও বেড়েছে। এ ছাড়া অনেক খামারি লোকসানে পড়ে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছেন। এ কারণে দাম বাড়ছে।”
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এত দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সারোয়ার বলেন, “এই বাড়তি দামের কতটুকু পাচ্ছেন খামারিরা, সেটাও দেখতে হবে। খামার থেকে খুচরা পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত যে মধ্যস্বত্বভোগীরা রয়েছেন তারাও এর থেকে মুনাফা নিচ্ছেন। দাম বাড়ার পেছনে এটিও একটি কারণ।”