জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বড়খাল এলাকা থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকার যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়ছে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী প্রকল্পের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে অসময়ে হঠাৎ দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বড়খাল এলাকা থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙনের কবলে পড়তে শুরু করেছে চর ডাকাতিয়া গ্রামের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। হুমকির মুখে রয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু, মাদ্রাসা, মসজিদ, শত শত বাড়িঘর এবং ফসলি জমি। ইতোমধ্যে ওই এলাকার ওবায়দুল হক (৫০), হামিদুল ইসলাম (৪৫), মোখলেছ (৪০), মোশারফ (৩৫), আলমাস (৬২), আমজাদসহ (৬৫) আরও অনেক মানুষ বাড়িঘর ভেঙে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। গত প্রায় ২০ বছর থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খোলাবাড়ী, হাজারী, মাগুরিহাট, খানপাড়া ও মাঝিপাড়াসহ প্রায় অর্ধশত গ্রাম নদীগর্ভে চলে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল সরদার বলেন, “হঠাৎ করেই অসময়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। আমাদের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি সব নদীর মধ্যে চলে গেল। সরকার কিছু ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্ত তাতে কিছুই হলো না। এই ভাঙন যদি না ঠেকানো যায় তাহলে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীর মধ্যে চলে যাবে।”
চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান বলেন, “চর ডাকাতিয়াপাড়া, মাগুরিহাট, ফারাজিপাড়া ও কিসের মোড় গ্রামের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টি এটি। কয়েক দিন আগে নদী কিছুটা দূরে ছিল, এখন একেবারে বিদ্যালয়ের কাছে চলে এসেছে। যেকোনো সময় নদীর মধ্যে চলে যাবে আমাদের এই বিদ্যালয়টি।”
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা সুলতানা বলেন, “ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এর আগে জিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন রোধ করা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভবনটি নিলামে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অতি দ্রুতই ভবনটি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।”
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, “ভাঙনকবলিত ৬৭ মিটার এলাকায় ১০ হাজার ৮০০টি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। স্কুলটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছিল, কিন্তু তীব্র ভাঙনে সব ভেসে গেছে। তীব্র ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যমুনা নদীর ওই এলাকায় তীব্র ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ করা হচ্ছে।”