• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘একমাত্র মা, কেমনে ভাসামু নদীতে’


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম
‘একমাত্র মা, কেমনে ভাসামু নদীতে’
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রাম। ছবি : সংগৃহীত

‘চারদিকে হানি (পানি), মা রে কই নিমু, কন্ডে (কোথায়) দাহ করমু, কন্ডে কবর দিমু! একবার চিন্তা করচ্চি কলার ভেলায় ঘরের পাশের নদীতে ভাসায় দিমু, আবার চিন্তা কইচ্চা (করেছি) একমাত্র মা, কেমনে ভাসামু নদীতে? কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ফেনী সদর উপজেলার ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের সুকুমার বর্মণ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন সত্তরোর্ধ্ব প্রিয়বালা। দারিদ্র্যের কারণে ঠিক মতো চিকিৎসাও করাতে পারেনি পরিবার। গত ২১ আগস্ট বিকেল থেকে যখন পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করতে থাকে, তখনই সবাই প্রমাদ গুনতে থাকেন। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রিয়বালাদের উঠান ডুবে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে।

রাত বাড়তে থাকলে ঘরে পানিও বাড়তে থাকে। প্রিয়বালাকে নিয়ে ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ, তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে অবস্থান নেন। মাকে পানি থেকে বাঁচাতে ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে রাখেন ছেলে।

বানের পানিতে এই অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে ছয় দিন থাকার পর প্রিয়বালা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের শরীর খুব খারাপ অবস্থার দিকে গেলে, মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সুকুমার অনেক কষ্টে একটি নৌকা ভাড়া করেন। তিনি ও তার স্ত্রী মিলে প্রিয়বালাকে নিয়ে ছুটেন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রিয়বালা।

মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। কিন্তু চারদিকে পানি। শ্মশানে দাহ করার মতো অবস্থা নেই। এবার শুরু হয় প্রিয়বালাকে সমাধিস্থ করার নতুন যুদ্ধ। উঠানে, ঘরে পানি। কোথাও সমাধিস্থ করার উপায় নেই।

পেশায় দর্জি সুকুমার চন্দ্র বর্মণ বলছিলেন, মাকে যখন রান্নাঘরের মেঝেতে সমাধিস্থ করার জন্য মাটি খুঁড়ছিলেন তখন ওই কক্ষে পানি ছিল না। অন্য সব কক্ষে পায়ের পাতা অবধি পানি। একপর্যায়ে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকলে গর্তের মধ্যে পানি উঠা শুরু করে। একদিকে তিনি মাটি খুঁড়ছিলেন আরেকদিকে স্ত্রী পানি সেচে ফেলছিলেন। মোটামুটি কিছুটা গর্ত করার পর প্রিয়বালাকে যখন শোয়ানো হচ্ছিল তখন সেখানে পানি ঢুকে যাচ্ছিল। তারপরও কোনো রকমে তাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

Link copied!