• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বদলে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম
বদলে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন

ফরিদপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প ‘স্বপ্ননগর’। এখানে আশ্রয় পাওয়া উপকারভোগীরা হাস-মুরগি পালনসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাবলম্বী হচ্ছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায়ভুক্ত স্বপ্ননগরে প্রায় তিনশ ঘর তৈরি করা হয়। এখানে ভূমিহীনদের জমিসহ ঘরের পাশাপাশি একটি মসজিদ, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি মাছ বাজার স্থাপন করা হয়। আলফাডাঙ্গার উপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের কবলে নিঃস্ব পরিবারসহ ভূমিহীনদের আশ্রয় এই স্বপ্ননগরে।

জানা গেছে, স্বপ্ননগরে ঘর পেয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী সচিন দাস ও তার স্ত্রী সবিতা দাস (৫৬)। তারা দুজন এখন বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করছেন ধামা, কুলা, খলই, ডালাসহ গৃহস্থলীর নানা কুটিরশিল্প সামগ্রী।

সচিন দাস বলেন, “আগেও এসব হাতে তৈরি জিনিসপত্র বেঁচে দিন চলতো। কিন্তু নিজের কোন ঠিকানা না থাকায় কোন ভরসা ছিলনা। মাথা গোঁজার কোন ঠাঁইও ছিলনা। এখন নিজেরা এসব বিক্রি করে সংসার গোঁছানোর স্বপ্ন দেখছি। তিন ছেলে নিয়ে খেয়েপড়ে বাইচ্যা আছি।” বিসিক সহায়তা করলে তিনি আরও এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা তার।

সচিন দাসদের মতো এমন অনেকেরই জীবন বদলে যাওয়ার গল্প তৈরি হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে। যাদের কিছুদিন আগেও কোনো বসতবাড়ি ছিল না, অন্যের বাড়িতে বাস করতেন। যদিও বা কেউ পরের জমি বা সরকারি জমিতে ঘর করে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তাদের সে ঘরবাড়ির দিকে তাকালে ভেসে উঠত কবি জসীমউদ্দীনের সেই আসমানীদের ভেন্নাপাতার ছাউনির চিত্র। বর্তমানে সেই ভেন্নাপাতার ছাউনির বদলে ভূমি ও গৃহহীনরা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।

এক বছর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থেকে পরিবারের জীবনমান পাল্টে গেছে বলে জানিয়েছেন ছবেদা বেগম (২১)। ছবেদা বেগম বলেন, “আগের ত্যা ভালোই আছি। এহন হাঁস-মুরগি পালতেছি। গতবার ১০ হাজার টাকা বেঁচছি। এই বছরও ৬ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি বেঁচছি। এহনও আমার কাছে ২০ হাজার টাকার হাঁসমুরগি আছে। স্বামীর রোজগার আর আমার এই আয় দিয়া এহন আমাগের ভালোই আয়-উন্নতি হইতেছে। সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আইস্যা এহন নিজেগের জীবনডারে গুছায় নিবার পারতেছি।”

ছবেদা বেগম জানান, এক বছর আগেও তারা ছিলেন ভূমিহীন। মাথা গোঁজার কোন ঠাঁইও ছিল না। স্বামী রাসেল মোল্যা একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ঘর তুলে থাকতেন। এখন নিজেদের একটা ঠিকানা হয়েছে। যেটি তাদের জীবনসংগ্রাম এগিয়ে নিতে জীয়নকাঁঠির মতো কাজ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহিত মুজিব শতবর্ষে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প সমাজের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের হতদরিদ্রদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। তাদের স্বাস্থ্য, গড় আয়ু, শিক্ষা, আয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলার নগরকান্দা উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করার পর এবার জেলার আলফাডাঙ্গা ও সালথা এ দুটি উপজেলাকেও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের আরও অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এ দুটি উপজেলাকেও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন।

জানা গেছে, সরকার ঘোষিত ‘মুর্জিব শতবর্ষে থাকবে না কেনো গৃহহীন’ কর্মসূচিতে ‘সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’এর আওতায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় তিনটি ধাপে ৭৩৫টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। সালথা উপজেলায় ঘর পেয়েছে ৬৩৩টি ভূমিহীন পরিবার। জেলায় সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দুইশর বেশি ভূমিহীন পরিবার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী রয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে ঘরগুলোতে কৃষি খামার, হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলছেন। ঘরের আঙিনায় লাগানো হয়েছে পুঁই, সিমসহ নানাপ্রকারের গাছপালা।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “ফরিদপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমাদের যেই কর্মপরিকল্পনা ছিল সেটি খুব ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে ৪৪৭টি ঘর উদ্বোধন করবেন। আমাদের ৫ হাজার ৭২৭টি ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২০৩টি ঘর নির্মাণ করেছি। আর প্রায় ৫শ বাকি থাকে। আশা করছি জুনের আগেই বাকি ঘরগুলো নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারবো।”

Link copied!