• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাবিক সাব্বিরের বাড়িতে নেই ঈদের আনন্দ


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
নাবিক সাব্বিরের বাড়িতে নেই ঈদের আনন্দ
নাবিক সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদের সময় কাটে সন্তানের জন্য প্রার্থনায়। ছবি : প্রতিনিধি

সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে আছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে সাব্বির।

১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের অপেক্ষায় সময় পার করছেন সাব্বিরের বৃদ্ধ মা-বাবা। অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির খবরের অপেক্ষায় সময় পার করছেন সাব্বিরের বৃদ্ধ মা-বাবা। বাড়িতে বসে নামাজ আদায় করে তাদের সন্তান ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে সময় পার করছেন। আর মাঝে মধ্যেই ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কিনা তা দেখছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা ছেলের অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছেন। ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে সুসংবাদের অপেক্ষায় বন্দি নাবিক সাব্বিরের বাবা-মা।

গত বছরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করেছেন নাবিক সাব্বির। কিন্তু এ বছর জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর সাব্বিরের ভাগ্যে কী ঘটছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই তার পরিবারে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জেলার নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করে। টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্রগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করে সর্বশেষ গত বছরের ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।

জানা যায়, প্রতিবছর ছেলেই ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি তাদের। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদে ফিরে আসার অপেক্ষা করছে তার বাবা-মা। জলদস্যুরা কথায় কথায় মাথায় বন্দুক ধরে, জাহাজে খাবার সংকট, পানি সংকট এমন নানা দুশ্চিন্তায় আরও ভেঙে পড়েছেন তারা। সন্তানের ভালো সংবাদের অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না তাদের।

সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, “জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর একদিন ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর আর কথা হয়নি আমি ও আমার স্ত্রী ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকি কখন সাব্বির কল দিয়ে বলবে ভালো আছি চিন্তা করো না তোমরা। আমার ছেলে গতবছর এক সঙ্গে ঈদ করেছি। এবারও আশায় আছি, জানি না করতে পারবো কিনা। সরকারের কাছে দাবি অতি দ্রুত আমার ছেলেসহ সবাই বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসুক।”

সাব্বিরের মা সালেহা বেগম বলেন, “গতবার আমার ছেলে আমাদের সঙ্গে ঈদ করছিল। এবার আমার ছেলে ঈদ করতে পারবে কি না আমাদের সাথে জানি না। এ বলেই কান্নায় করতে করতে বলেন, আমরা কোন কিছু চাই না আমার ছেলেকে চাই। আমরা ছেলের সাথে ঈদ করতে চাই। ছেলে বাড়ি না আসলে আমাদের আর ঈদ করা হবে না। সরকারের কাছে আবেদন ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ সবাইকে ছাড়িয়ে আনে।”

সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, “যখন তারা দস্যুদের কবলে আটক হয় তখন বলেছিল ২০-২২ দিনের খাবার আছে। তারপর আর কথা হয়নি আমার ভাইয়ের সঙ্গে। কেমন আছে তাও বলতে পারবো না। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি আমরা। সরকারের কাছে দাবি আমার ভাইকে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনার হোক।”

তিনি জানান, ভাইয়ের চিন্তায় বাবা-মা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন না। তারা সারাক্ষণ কান্না করেন আর বলেন আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার একমাত্র ভাইয়ের কিছু হলে বাবা-মাকে বাঁচাতে পারব না। সরকারের কাছে দাবিÑ আমার ভাইকে ঈদের আগেই ফিরিয়ে আনা হোক।

সহবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ মোল্লা, সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে খোঁজখবর রাখছি।

Link copied!