সম্প্রতি পাবনার সুজানগরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনের নামে মামলা করেছেন সুজানগর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে আট বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে। এ ছাড়াও ওই মৃত ব্যক্তির ৮৫ বছরের অসুস্থ বড় ভাইকে করা হয়েছে দ্বিতীয় আসামি, যিনি প্রকৃত অপরাধী নন বলে দাবি পরিবারের।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোনোপ্রকার যাচাই-বাছাই না করেই নিজের ইচ্ছেমতো মামলা দায়ের করেছেন নায়েব বাবুল আক্তার। এতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ভুক্তভোগীরা। তবে বিষয়টিকে সামান্য ভুল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে মামলাটি করেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। এতে প্রধান আসামি করা হয় ভবানীপুরের বন্দের মণ্ডলের ছেলে কাদের মণ্ডলকে, যিনি আট বছর আগে মারা গেছেন। একই মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে কাদের মণ্ডলের বড় ভাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শুকুর মণ্ডলকে। এ ছাড়াও এই মামলায় যাকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে তিনি মামলার সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
মৃত কাদের মণ্ডলের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, “৭ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। ৩ শিশু সন্তানকে নিয়ে অসহায়ভাবে বসবাস করছি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে গত পরশুদিন শুনলাম আমার স্বামীকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে প্রধান আসামি করা হয়েছে। একজন মৃত মানুষ কিভাবে এখন বালু উত্তোলন করতে পারে?”
কাদের মণ্ডলের বড় ভাই মামলার দ্বিতীয় আসামি শকুর মণ্ডল বলেন, “আমি ভালোভাবে চলাফেরাই করতে পারি না। আমার বয়স ৮৫ বছর। বালু কিভাবে কোথায় কারা উত্তোলন করে কিছুই জানি না। অথচ আমার মৃত ছোট ভাই ও আমাকে আসামি করা হয়েছে।”
মামলার প্রধান সাক্ষী ইকবাল সরদার বলেন, “আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। পরে শুনলাম আমাকে নাকি সাক্ষী করা হয়েছে। আর আসামি করা হয়েছে মৃত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের। আমরা এলাকাবাসী মামলার আসামিদের নাম শুনে হতবাক হয়েছি। যাদের নাম শুনছি তারা অনেকেই নিরীহ সাধারণ মানুষ।”
এবিষয়ে অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার বলেন, “বালু উত্তোলন কারা করছে তা আমি সরাসরি দেখিনি। ওই এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শুনে মামলা করেছি। পরে মামলা সংশোধন করতে থানায় আবেদন করেছি।”
সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, “নায়েব সাহেব যেভাবে এজাহার দিয়েছেন সেভাবেই আমরা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখন কেউ যদি মৃত বা অসুস্থ থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে পরে বাদ দেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, “এতে গাফিলতি কিছু নেই। যাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নায়েব সাহেব মামলাটি করেছিলেন, তারা ভুল তথ্য দিয়েছিল। পরে জানা গেছে উনি মৃত। এতে গাফিলতি কিছু নেই। এবিষয়ে ইতোমধ্যেই থানায় লিখিতভাবে দেওয়া আছে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।”