• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তাপমাত্রা নামল ৯ ডিগ্রিতে, শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত নীলফামারী


নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪, ১০:১৩ এএম
তাপমাত্রা নামল ৯ ডিগ্রিতে, শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত নীলফামারী
ঘন কুয়াশা চারপাশে। জেঁকে বসেছে শীত। ছবি : সংগৃহীত

কয়েক দিন ধরে নীলফামারীতে বিরাজ করছে তীব্র শীত। সারা দিনই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। সেই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে হিমেল বাতাস। রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডার প্রকোপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। ছয় দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত আচ্ছন্ন থাকায় দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা দুই দশমিক ৩ ডিগ্রি কমেছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

লোকমান হোসেন বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা যদি ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা এর চেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সে হিসেবে নীলফামারীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

লোকসান হোসেন জানান, আজ সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন থাকবে।

সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। দুপুর পর্যন্ত এমন ঘনকুয়াশা থাকতে পারে। যে কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে।

তীব্র ঠান্ডায় জেলাজুড়ে কাহিল হয়ে পড়েছেন মানুষ। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ। শীতে কাজে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে টপটপ করে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে।

ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ এলাকার দিনমজুর হাফিজুল ইসলাম হক বলেন, “ঠান্ডা হইলেই কি আর গরম কি, হামরা গরিব মানুষ হামাক কাম করি খাবার নাগিবে। কাম না করিলে কী আর পেটে ভাত যাবে। ঠান্ডার জন্য কাজ কামও নাই, যেটুকু পাচ্ছি সেটাই করতে হচ্ছে।”

ইজিবাইক চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে আগের মতো ভাড়া পাওয়া যায় না। লোকজন তেমন প্রয়োজন ছাড়া বের হয় না। আগের থেকে অর্ধেক ইনকাম হচ্ছে। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে।

মুদি ব্যবসায়ী নিপেন ঘোষ বলেন, শীতের কারণে বেচাবিক্রিও একদম নাই। যে ঠান্ডা মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময় চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের একেবারেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ৪০ হাজার পিস কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ১০ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।”

Link copied!