ফরিদপুরের সালথায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মাদ্রাসা সুপারের দেওয়া কুপ্রস্তাবের অভিযোগটি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজেই। মাদ্রাসা সুপারকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য মাদ্রাসার খণ্ডকালীন শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য কাইয়ূম মোল্যা তাকে বাধ্য করেছেন।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) এ ঘটনায় সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছে ওই মাদ্রাসাছাত্রী।
ইউএনওকে দেওয়া অভিযোগে ওই মাদ্রাসাছাত্রী দাবি করেন, মাদ্রাসার খণ্ডকালীন শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য কাইয়ূম মোল্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে সুপারের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ দিতে তাকে বাধ্য করেছেন। মাদ্রাসা সুপার তাকে কোনো কুপ্রস্তাব দেননি।
এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “ওই ছাত্রী ক্লাস রুমে ১৫-১৬ জন ছাত্রীর সামনে কুপ্রস্তাবের কথা আমাদের জানিয়েছে। এখন বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মাদ্রাসা সুপার ওই ছাত্রীর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পাল্টা আমাদের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেওয়ান। মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে আরও ৭-৮ জন ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”
মো. কাইয়ুম মোল্যা বলেন, “মাদ্রাসা সুপার যে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন, সে ব্যাপারে ভুক্তভোগীর দেওয়া একটি ভিডিও আমাদের কাছে আছে। সেখানে ওই ছাত্রী কুপ্রস্তাবের বিষয়টি আমাদের কাছে বলার কারণে আমরা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছি। পুলিশের সামনেও কুপ্রস্তাবের বিষয়টি জানিয়েছে ওই ছাত্রী। এখন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন ওই মাদ্রাসা সুপার।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মাদ্রাসা সুপার ইব্রাহিম হোসাইনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার (৬ নভেম্বর) সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, “এক প্রবাসী যুবকের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি ওই প্রবাসীর স্ত্রী আমাকে একাধিকবার জানিয়েছেন। তাই ওই ছাত্রীকে ডেকে রাগারাগি করেছি। কিন্তু আমাদের খণ্ডকালীন শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি বড় করে এমন পরিবেশ তৈরি করেছেন।”
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী বলেন, “উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বালি বলেন, “ওই ছাত্রী এ সংক্রান্ত পাল্টা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেখানে সে দাবি করেছে, জোরপূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সুপারের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ দিতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়েছে। তাদের এটাও আমলে নিয়ে তদন্ত করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”