কুড়িগ্রামে গত দুদিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। কখনো হালকা আবার কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কাজে বের হতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। বিশেষ করে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা শ্রমজীবী মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। এ ছাড়া নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৯ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।
শহরের পশুর মোড়ের রিকশাচালক খোকন মিয়া বলেন, “আজ সকাল থাকি বিকেল হলো বৃষ্টিত ভিজি ৪টা ভাড়া মারছি। মাত্র ৬০ টাকা কামাই হইছে। বাজার করার কোনো টাকা নাই। ঘর থেকে মানুষ না বের হলে ভাড়া হয় কেমনে?”
কদমতলা গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে বৃষ্টি, কাজ-কাম বন্ধ। টাকার চিন্তায় কিছু ভালো লাগে না। রাত পোহালে কিস্তি। ঘরে নাই বাজার সদাই। খুব দুশ্চিন্তায় পড়ছি। এভাবে বৃষ্টি হলে মানুষের চলাফেরা কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে যাবে।”
কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. সুবল চন্দ্র রায় বলেন, “গত দুদিন ধরে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুদিন এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।”
এদিকে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বেড়েছে। পাশাপাশি শহরের অনেক স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক যাওয়ার রাস্তা, জেলার ফায়ার সার্ভিসের অফিস, হাসপাতাল চত্বর, হাটির পাড়, পশুর মোড়, পুরাতন থানাপাড়াসহ পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কারণে লোকজন বিপাকে পড়েছেন। পৌরসভার সঠিক ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকার কারণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলেও অনেকে দোষারোপ করেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, নুনখাওয়া পয়েন্ট, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ক্রমবর্ধমান, বিপদ স্তর থেকে ২৫৮ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। চিলমারী পয়েন্ট, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ স্তর থেকে ২২১ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্ট, ধরলা নদীর পানি ক্রমবর্ধমান, বিপদ স্তর থেকে ১১৪ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। পাটেশ্বরী পয়েন্ট, দুধকুমার নদের পানি বিপদ স্তর থেকে ১৬৪ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে এবং কাউনিয়া পয়েন্ট, তিস্তা নদীর পানি বিপদ স্তর থেকে ১৭ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে।
ধরলা নদী তীরবর্তীর মাধবরাম গ্রামের কৃষক মো. আনারুল কবির বলেন, “কয়েক দফা বন্যায় আমন আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। আবারও নদীর পানি বাড়তেছে। দুদিন ধরে যে হারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকলে পানিতে আমনক্ষেত তলিয়ে যাবে। এবার আবাদ নষ্ট হলে এ মৌসুমে আর আমনের আবাদ করা যাবে না।”
তীরবর্তীর শুলকুর বাজারের আরেক বাসিন্দা মো. রোকন মিয়া বলেন, “গতকাল থেকে যে বৃষ্টি হচ্ছে, এ কারণে নদীর পানি খুব বাড়ছে। নদীর মাঝত গতকাল সকালে চর দেখছি, আজ পানিতে সোগ তলাইছে।”
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শনিবার থেকে জেলায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীরগুলোর পানি বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক। তবে এই মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতির কোনো সম্ভাবনা নেই।”