• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোজায় অভিজিতের দোকানে বিশেষ মূল্য ছাড়


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৫:০২ পিএম
রোজায় অভিজিতের দোকানে বিশেষ মূল্য ছাড়

রমজানের পবিত্রতার প্রতি সম্মান জানিয়ে মিষ্টি, দই, ঘিসহ সব পণ্যে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছেন অভিজিৎ ঘোষ নামের এক মিষ্টিব্যবসায়ী। রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃতিম সংকট তৈরি করে যেখানে পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন, সেখানে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রোজায় মূল্য ছাড় দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন অভিজিৎ। তার এই মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রেতা, ব্যবসায়ীসহ সব ধর্মের মানুষ।

রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নড়িয়া বাজারের পূর্ব মাথার মিষ্টি কানন নামে একটি দোকানে এমন চিত্র দেখা যায়।

বাজারের বণিক সমিতি ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজানে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সব পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণার পরেও এসব ব্যবসায়ীরা কিছুতেই পণ্যের দাম কমাতে রাজি হন না। সেখানে নিজের উদ্যোগে রমজানের পবিত্রতার প্রতি সম্মান জানিয়ে মিষ্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ তার দোকানের সব পণ্যের দাম কমিয়ে সীমিত লাভে বিক্রি করছেন।

দোকানটির ম্যানেজার অজিত কুমার ঘোষ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রমজান উপলক্ষে দোকান মালিক সব পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। রমজানের আগে দই ২০০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৬০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২২০ টাকা, চমচম ৩৫০ টাকা, সন্দেশ ৬৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৫৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৬০০ টাকা, রসগোল্লা  ২৬০ টাকা, রস মালাই ৪৫০ টাকা, সর মালাই ৬০০ টাকা, মাডা ১৫০ টাকা, বোম্বে রোল ৬০০ টাকা বিক্রি করতাম। রমজান উপলক্ষে দই ১৮০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৪০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২০০ টাকা, চমচম ২৮০ টাকা, সন্দেশ ৫৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৪৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৫২০ টাকা, রসগোল্লা  ২২০ টাকা, রস মালাই ৩৫০ টাকা, সর মালাই ৫৫০ টাকা, মাডা ১২০ টাকা, বোম্বে রোল ৫৫০ টাকা বিক্রি করছি।”

মো. কাউসার নামের এক ক্রেতা বলেন, “ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও দোকানের মালিক রমজানের প্রতি যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তা সত্যিই বিরল। কেননা আমরা দেখতে পাই রমজানকে পুঁজি করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। অভিজিৎ ঘোষের জন্য আমি দোয়া করি। তার উছিলায় অনেক গরীব মানুষ ভালো কিছু পণ্য খেতে পারবেন।”

শাহজাহান হোসেন নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি জানতাম না যে মিস্টি কানন তাদের পণ্যে ছাড় দিয়েছে। ছোট মেয়ে মিষ্টি আর মাঠা খেতে চেয়েছে। দোকানে এসে কেনার পর দেখলাম, দাম অন্য দোকানের তুলনায় কম। এখন যে টাকা বেঁচেছে, তা দিয়ে অন্য কিছু কিনতে পারব।”

মিস্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রমজান পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সবাই রোজা থাকেন। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে রজমানে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই দোকানের সব পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছি। সীমিত লাভে কর্মচারীদের বেতন ও দোকান খরচ দিয়ে আমার মোটামোটি লাভ হবে। যে লাভ হবে, তাতেই আমি খুশি।”

নড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নড়িয়া বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব জাফর শেখ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মিষ্টি কাননের মালিক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। রমজানর পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে সে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সত্যিই মহৎ একটি কাজ। আমরা মুসলমান হয়েও সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেই, সেখানে একজন অভিজিৎ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তার এই মহৎ কাজটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। তার জন্য দোয়া করি।”

Link copied!