• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গান গেয়ে গেয়ে পিটিয়ে হত্যা, এবার স্ত্রীকেও মেরে ফেলার হুমকি


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৭:১৯ এএম
গান গেয়ে গেয়ে পিটিয়ে হত্যা, এবার স্ত্রীকেও মেরে ফেলার হুমকি
চট্টগ্রাম গণপিটুনিতে নিহত শাহাদাত হোসেনের মা দেলোয়ারা বেগম। ছবি : সংগৃহীত

পুরোনো বন্ধু সাগরকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলেন শাহাদাত। সেদিন সাগরের ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্যই দুপুরে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। এর পর থেকে মোবাইল বন্ধ। পরদিন ফেসবুকে তার লাশ উদ্ধারের ভিডিও দেখে জানতে পারেন শাহাদাত মারা গেছেন।

চট্টগ্রামে একদল তরুণের হাতে গণপিটুনিতে নিহত শাহাদাত হোসেনের (২৪) স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন কথাগুলো। 

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন গণমাধ্যমে শারমিন আক্তার বলেন, “সাগর আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমি বর্তমানে স্বামীর বাসায় থাকছি না। আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই সময় স্বামীকে হারালাম। আমার স্বামীকে যারা মারল, আমি তাদের বিচার চাই।”

শাহাদাত হোসেনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠতে পারেননি শারমিন আক্তার। শনিবার শাহাদাতকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাতকে উড়ালসড়কের নিচে দুটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ সময় গান গেয়ে তাকে মারধর করছেন একদল তরুণ। ভিডিওটিতে মারধরের শিকার ব্যক্তি যে শাহাদাত, সেটি শনিবার রাতে পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন শারমিন আক্তার। শাহাদাত ছিলেন ফলমণ্ডি এলাকার ভ্যানচালক।

শারমিন আক্তার বলেন, “সেদিন দুপুরে সাগরের ফোন পেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। সাগর আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমি বর্তমানে স্বামীর বাসায় থাকছি না।”

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সাগর আছেন কি না, এমন প্রশ্নে শারমিন সরাসরি জবাব দিতে রাজি হননি। তবে সাগর ওই স্থানের আশপাশে প্রায়ই থাকতেন বলে জানান তিনি।

মো. শাহাদাত হোসেনের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামে। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকতেন নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। সেখানে সবাই নিশ্চিত করেছেন ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তি শাহাদাত। তবে বর্তমানে তার স্ত্রী সেখানে থাকেন না।

সোমবার সরেজমিনে বয়লার কলোনিতে দেখা যায়, সেখানে এক কক্ষের একটি ঘরের দরজায় বসে ছিলেন দেলোয়ারা বেগম। দেলোয়ারা বেগমও বলেন, সেদিন তার বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। পরদিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়। যে বন্ধুর ফোন এসেছিল, সেটি সাগর বলে নিশ্চিত করেছেন দেলোয়ারা বেগম। তবে সাগরের বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কে জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে নগর পুলিশের একাধিক টিম।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আমাদের নজরে এসেছে। যদিও এ ঘটনায় আগেই হত্যা মামলা হয়েছিল। এখন আসামিদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৩ আগস্ট। ওইসময় থানায় একেবারে পুলিশ ছিল না বললেই চলে। এটির সুযোগ নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন এ হামলায় অংশ নেয়।

কারা জড়িত জানতে চাইলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে না। কেউ হয়তো ভুল বুঝিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারীদের হাতে ভুক্তভোগীকে তুলে দিয়েছে। যাহোক এটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। নগর পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমেছে। আশা করি শিগগিরই সুসংবাদ মিলবে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শাহাদাতের স্ত্রী সেটি দেখে নিশ্চিত করেন যে, মারধরের শিকার ব্যক্তিটিই তার স্বামী। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করছেন। একই সঙ্গে দুই হাত খুঁটিতে বেধে এক যুবককে পেটাচ্ছেন। মার খেয়ে ভুক্তভোগী যুবকের মাথা ঢলে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া  ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন।

গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে।

এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

Link copied!