ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমানকে হাতুড়িপেটা করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, “অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান কলেজের যোগদানের পর থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন না করে কলেজ ছাত্রদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেছিলেন। স্বৈরাচার পতনের পর থেকে আমরা এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। মানববন্ধনও করেছি। অবশেষে বৃহস্পতিবার তিনি নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা খুশি।”
অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে আমি আর আমার ছেলে কলেজে প্রবেশ করার সময় আওয়ামী লীগ নেতা কাইয়ুম মোল্যা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য অছাত্র লালন, মনির এবং কয়েকজন ছাত্র জোর করে আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি বাগানের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা আমাদের বাপ-ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তারা জোর করে আমার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়।“
ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, “আন্দোলনরতরা বেশিরভাগ অছাত্র। মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কামরুল গাজী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কয়েকমাস আগে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার একটি ভুয়া বিল জমা দেন আমার কাছে। আমি ওই বিলে স্বাক্ষর না করায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এরপর থেকে কামরুল গাজী ও কাইয়ুম মোল্যা আমার পিছে লাগে। শেষ পর্যন্ত আমাকে পিটিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিল। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল গাজী। তিনি বলেন, “আমি ফরিদপুর আছি। আমি তো এসব বিষয় কিছুই জানি না। অধ্যক্ষ শুধু শুধু আমার নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাইয়ুম মোলার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান বালী বলেন, “অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা একটি মানববন্ধন করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী-পুলিশসহ আমি ঘটনাস্থলে যাই। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয় তেমন সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনাটি আমরা মীমাংসা করে দেই। এ সময় শিক্ষার্থীরা আর আন্দোলন করবে না মর্মে লিখিত দেয়।”
ইউএনও আরও বলেন, “কিন্তু হঠাৎ করে সন্ত্রাসী কায়দায় অধ্যক্ষকে মারধর ও তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমান সরকারও এর বিরোধী। তবে জানতে পেরেছি স্থানীয় কামরুল গাজী ও কাইয়ুম মোল্যা নামে দুই ব্যক্তির ইন্ধনে শিক্ষার্থী ও কিছু দুষ্কৃতকারীরা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”