বগুড়ার আদমদীঘিতে অভাব ও অসুস্থতার কারণে চাঁন মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে নদীর পাড়ে রেখে গেছেন তার স্ত্রী মিতা বেগম।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে।
চাঁন মিয়া বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের পাওগাছা তালপুকুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের ছেলে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁন মিয়া পেশায় একজন চাতাল শ্রমিক ছিলেন। দশ বছর আগে মিতা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে আট বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
প্রথমদিকে চাঁন মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। পরে তার (চাঁন মিয়ার) মা আসমা বেগম মারা যাওয়ায় বাবা আব্দুল জব্বার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঘরে সৎ মা আসায় বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এরপর জীবিকার তাগিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিভিন্ন এলাকার চাতাল মিলে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ গত এক বছর ধরে শাজাহানপুর উপজেলার রাণীরহাটে একটি ভাড়া বাসায় ছিলেন।
বেশ কিছুদিন থেকে চাঁন মিয়া নানা জটিল রোগে ভুগতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ধার দেনা করে স্ত্রী মিতা বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করিয়েছেন। অবশেষে তিনি অভাবের কারণে চিকিৎসা করাতে না পেরে মিতা বেগম স্বামীকে নাগর নদীর তীরে রেখে আসার সীদ্ধান্ত নেন।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) স্বামী চাঁন মিয়াকে আদমদীঘির নাগর নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে ত্রিপল দিয়ে ঘর বানিয়ে কিছু শুকনা খাবার ও পানি দিয়ে চলে যান। এরপর তিনি (মিতা) জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান।
চাঁন মিয়ার স্ত্রী মিতা বেগম বলেন, “তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়ে গেছি। চিকিৎসা বন্ধ করায় ‘বারজারস নামক’ রোগের কারণে তার কাছে গেলেও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ জন্য কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে তার নানির বাড়ি কাহালুতে রেখে অর্থ উপার্জনের জন্য বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে আসি।”
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মানবিক কারণে অসহায় চাঁন মিয়াকে নাগর নদের আদমদীঘি অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের পর জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে।