আধুনিক তৈজসপত্রের দাপটে হুমকির মুখে পড়েছে শেরপুরের মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পীরা বলছেন, বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল ও সিলভারের জিনিসপত্র সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল-কড়াই, খেলনাসহ অন্য সব সামগ্রী এখন বিলুপ্তির পথে। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের নতুন প্রজন্ম অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। অন্যদিকে এ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
জেলার সদর উপজেলার ভাতাশালা ইউনিয়নের বয়ড়া পালপাড়ায় গেলে মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় মৃৎশিল্পী রতন পাল বলেন, একসময় বয়ড়া পালপাড়ার কুমারদের সোনালি দিন ছিল। বছরজুড়ে কুমারবাড়ি বা পালপাড়াতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খাবার থালা, কলসি, জগ, গ্লাস, গো-খাদ্যের চাড়ি, মুড়ি ভাজার পাতিলসহ নানা আসবাব এবং বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী তৈরির জমজমাট কর্মযজ্ঞ চলত। বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈরি তৈজসপত্রের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা সামগ্রী।
আরেক মৃৎশিল্পী জিতেন্দ্র পাল বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে ২৫-৩০ জন মৃৎশিল্পী টাঙ্গাইল থেকে শেরপুরের বয়ড়া এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে তাদের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। পরে আরও শতাধিক পরিবার এখানে এসে মাটির তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে এলাকাটি পালপাড়া নামে পরিচিতি পায়।
নারায়ণ পাল নামের একজন বলেন, “১০ বছর ধরে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। কারণ, সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতারা এখন প্লাস্টিক, স্টিল ও সিলভারের তৈরি জিনিসপত্র বেশি কিনে। এ জন্য মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য সামগ্রীর কদর কমে গেছে। তিন-চার বছর আগে মিষ্টি-দইয়ের পাতিল এবং ফুলের টবের কিছুটা চাহিদা থাকলেও এখন শুধু দইয়ের পাতিল ছাড়া অন্য কোনো মালামাল আর কেউ নেয় না। এখন দিন যতই যাচ্ছে জৌলুশ ততই কমে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে সেই কর্মব্যস্ততার দিন।”
শেফালি রানী পাল বলেন, “একসময় বিনা পয়সায় মাটি পাওয়া গেলেও এখন সেই মাটি উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে অনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কয়লা, কাঠ এবং তুষের দামও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে মাটির সামগ্রী বিক্রি করে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পৈতৃক এ পেশা ধরে রেখে কোনো রকমে টিকে আছি আমরা।”
পালপাড়ার রমেন পাল বলেন, “একসময় গরুর চাড়ি ও ধান-চাল রাখার মটকা নেওয়ার জন্য কৃষকরা পালপাড়ায় এসে বসে থাকতেন। কোনো রকমে কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ওই সব জিনিসপত্র নিয়ে যেতেন। আমাদেরও এসব জিনিসপত্র তৈরি জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকতে হতো।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) জেলা শাখার কর্মকর্তা আতাউর রহমান ফকির বলেন, মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। যোগাযোগ করলে মৃৎশিল্পীদের এ সুবিধা দেওয়া হবে।