বরিশাল পৌঁছেই বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের খোঁজ নিতে ছুটে গেলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দেড়টার দিকে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছার আগেই কবি জীবনানন্দ সড়কের অক্সফোর্ড মিশনে যান তিনি। এসময় রেহানার পক্ষ থেকে ফুল ও ফল দেওয়া হয়।
মিশনের ফাদার জন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “প্রচুর ফুল, ফলসহ উপহার সামগ্রী নিয়ে চার্চে আসেন শেখ রেহানা। তিনি আধা ঘণ্টা চার্চে কাটিয়েছেন।”
শেখ রেহানা চার্চে গিয়ে লুসি হেলেনের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
তিনি হলরুমে ঢুকেই লুসি হল্টের কাছে গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পাশে বসে লুসি হল্টের হাত ধরে তার শারীরিক খোঁজ খবর নেন।
ফাদার জন জানান, শেখ রেহানা চার্চ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি চার্চের জন্য অনুদানও দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, শেখ রেহানা আগমনের খবর দুদিন আগে থেকেই জানতেন তারা। আড়ম্বরপূর্ণ কোনো আয়োজন নয়। মূলত লুসি হল্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই আসেন তিনি।
এ সময় ফাদার জন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস, সিস্টার মার্গারেট, সিস্টার শেফালী, সিস্টার শিখা, চার্চের ম্যানেজার রিচার্ড রতন হালদার, লুসি হল্টকে নিয়ে প্রতিবেদন করা অপূর্ব অপু ও অপসোনিন ফার্মার প্রকল্প সমন্বয়ক রফিকুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় লুসি হল্ট বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে যেসব চিঠি লিখেছিলেন তা সংরক্ষণ করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শেখ রেহানা। তিনি লুসি হল্টের মতো মানবিক আদর্শ সবার ধারণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
একপর্যায়ে শেখ রেহানা গান শোনার আবদার করেন লুসি হল্টের কাছে। তখন লুসিও গান শোনান পরম কৃতজ্ঞতা নিয়ে। কাজী নজরুল ইসলামের ‘নাচ ময়ূরী নাচরে’ গানটি শোনান তিনি। এ সময় লুসির কণ্ঠে কণ্ঠ মেলান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
পরে সবার সঙ্গে ছবি তোলেন শেখ রেহানা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করতে বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখেছিল ব্রিটিশ নাগরিক ও মিশনের নার্স লুসি হল্ট। স্বাধীনতার পর বারবার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের মায়ায় জড়িয়ে তিনি বরিশালেই থেকে যান। ২০১৬ সালে লুসি হল্টের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনকল্যাণকর কাজ নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন আলোচনায় আসেন লুসি হল্ট। লুসির একমাত্র দাবি ছিল, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। খবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছায়। তার এই ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১৮ সালে প্রথমে ভিসা ফি মওকুফযুক্ত পাসপোর্ট হস্তান্তর এবং পরে গণভবনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।