কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, “৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের যে ধারা আজকে একটা স্রোতে এখানে এসে তারা মিলিত হয়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। আমরা যেখানে আজকে একত্রিত হয়েছি। আমাদের তরুণ বিপ্লবীদের সঙ্গে। একই সঙ্গে আমরা যারা মওলানা ভাসানীর ছবি বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। আপনারা তার ছবিকে মুছে ফেলেছেন সব জায়গা থেকে। আর শেখ মুজিবের ছবি নামাইলে আপনারা আপত্তি করেন। এটা হবে না।”
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সন্তোষে ‘মওলানা ভাসানী ও নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, “৬৯-এ দেশের জনগণের যে অভিপ্রায় সেই অভিপ্রায় আর জুলাই ২৪-এর জনগণের যে অভিপ্রায় এটা একটা স্রোতে সেখানে মিলেছে। এই স্রোত ঠেকাবে এই যে দুর্বার যে স্রোত যেটা তৈরি হবে বাংলাদেশে। এটা ঠেকাবার আর কোনো ক্ষমতা আমরা দেখি না। আমরা রাখব না আমাদের সামনে কারও। ফ্যাসিজম কীভাবে দাঁড়ায় সে আমাদের ইতিহাস মুছে দিয়ে নিজেকে কায়েম করেন।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে শেরে বাংলা ফজলুল হক নাই, সোহরাওয়ার্দী নাই, আবুল কাশেম ফজলুল হক নাই, কেউ নাই। খালি একটা মাত্র আইকন আছে শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি মূলত ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ কায়েম করেছিলেন। শুধু মতাদর্শ হিসেবেই নয়, একটা রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন একটা ফ্যাসিস্ট দর্শনের ভিত্তিতে। ফলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান মূলত সে ফ্যাসিস্ট শক্তির যে ভিত্তি, সেই ভিত্তি উপরে ফেলেছে, এজন্য অনেকে ভীত। ভাসানী, ভাসানী মুখে বলে লাভ নাই। তিনি যে রাষ্ট্র চেয়েছেন সে রাষ্ট্র এ রকম নিপীরণ রাষ্ট্র নয়, এ রকম জুলুমবাজ রাষ্ট্র নয়। তিনি চেয়েছেন রাষ্ট্র এমন হবে যেখানে রাষ্ট্র আমাদেরকে প্রতিপালন করবে।”
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, “মওলানা ভাসানীর স্মৃতি যদি আমরা রক্ষা করতে চাই তাহলে মওলানা ভাসানীর যে ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন সেটি পুনঃগঠন করতে হবে। সেটা গঠন করতে আসিফসহ দুই উপদেষ্টাকে বিনয়ের সঙ্গে বলব এটা তাদের প্রথম কর্তব্য। যদি এটা করতে না পারেন, তাহলে দেশকে বাঁচাতে পারবেন না। ট্রাস্টের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। ট্রাস্টের অধীনে সব সম্পত্তি যেটা ফ্যাসিস্ট শক্তি দখল করে নিয়ে গেছে তা উদ্ধার করতে হবে। সন্তোষে এলে আমি মর্মাহত হই। মাজারের যে দুর্দশা, ভাসানীসহ বিভিন্ন স্থাপনার দুর্দশা। এসব অতি দ্রুত কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি, আমরা যদি ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করতে চাই তাহলে বিগত দিনে যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সেগুলো আবার পুনরায় চালু করতে হবে।”
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এতে প্রধান আলোচক অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন ভাসানী পরিষদের সদস্য সচিব আজাদ খান ভাসানী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক সানু, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সরোয়ার তুষার ও অলিক মৃ, নাগরিক কমিটি টাঙ্গাইল শাখার কামরুজ্জামান শাওন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মারুফের মা মোর্শেদা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ফাতেমা রহমান বিথি, আবু আহমেদ শেরশাহ প্রমুখ।