মিলি আক্তার। পেশায় একজন গৃহকর্মী। তিনি যখন অন্তঃসত্ত্বা, তখন তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মিলি। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একই এলাকায় বসবাসকারী রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়ার কাছে নবজাতক সন্তানকে রেখে ওষুধ আনতে বাইরে যান মিলি। আর এই সুযোগে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। পরে রুবেল ও তার স্ত্রী এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ না দিলে শিশুটিকে খুলনার রূপসা নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি দেন। পরে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী মিলি আক্তার।
শুক্রবার (৩ মার্চ) রাতে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে অপহরণকারী মো. রুবেল শেখ (৩৫) ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। এ সময় অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, “২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ধামরাই থানার ঢুলিভিটা এলাকায় মিলি আক্তার একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, দেড় বা দুই মাস আগে রুবেল ও তানিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। একই এলাকার ভাড়াটিয়া হিসেবে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকতো।”
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, “২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রুবেল ও তানিয়ার কাছে সন্তানকে রেখে ওষুধ কিনতে যান মিলি। বাসায় ফিরে সন্তান বা রুবেলদের আর খুঁজে পাননি তিনি। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেলের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সেখানে গেলেও তালাবদ্ধ দেখতে পান। ২৮ ফেব্রুয়ারি মোবাইলে রুবেলকে পেলেও শিশুটিকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে ১ মার্চ রুবেল অন্য একটি নম্বর দিয়ে মিলি আক্তারকে ফোন করে জানায়, নবজাতক তার কাছে আছে। ফিরে পেতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। সন্তানকে ফিরে পেতে র্যাব-৪ এর সহায়তা চেয়ে অভিযোগ করেন মিলি। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব আসামিদের গ্রেপ্তার করে।”
রুবেল ও তার স্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানায়, দুই থেকে তিন মাস ধরে ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছে তারা। রুবেল ধামরাই এর ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতো না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় সে ঢুলিভিটা এলাকা থেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কৌশলে তার নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করে। পরে সুযোগ বুঝে শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, শিশুকে নিয়ে তারা ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাসে খুলনায় যায়। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামতো ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। এ সময় বিভিন্নভাবে শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে।
র্যাব জানায়, সে জীবিকার তাগিদে সাত থেকে আট বছর ঢাকায় গার্মেন্টসকর্মী ও রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতো। সে এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছে। রুবেলের বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিন বছর আগে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তার পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।