• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আট বছর ধরে বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী রফিক


জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪, ০৮:৩০ পিএম
আট বছর ধরে বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী রফিক
রোজাদারদের মাঝে খাবার পরিবেশন করছেন হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। ছবি : প্রতিনিধি

আট বছর ধরে রমজান মাসে বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার জয়পুরহাট আক্কেলপুর কলেজ কাঁচা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী রফিক। 

ইফতারিতে গরুর মাংসের বিরিয়ানীর সঙ্গে থাকে সালাদ এবং সেহরিতে সাদা ভাত, গরুর মাংস, মাছ, ডিম, ছোট মাছের ভাজি ও বিভিন্ন ভর্তা। সপ্তাহে তিন দিন সেহরিতে গরুর মাংস খাওয়ানো হয়। চার দিন থাকে ডিম, মাছ, ভাজি ও ভর্তা। হোটেল ব্যবসায়ী রফিকের এমন মহতি উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রা।  

এবার রমজানেও রফিকের হোটেলে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মুসল্লি সেহরি ও ইফতার খাচ্ছেন। অনেকেই ইফতারি ও সেহরি খেয়ে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করলেও রফিক রোজাদারদের কাছ থেকে টাকা নেন না।

স্থানীয়রা জানান, ১৭ বছর আগে রফিকুল ইসলাম কলেজ বাজারের কাঁচা পাইকারি সবজি বাজার পট্টিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খাবার হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার হোটেলে গরুর মাংস আর আটার রুটি বেশি চলত। গরুর ভূনা মাংসের আলাদা স্বাদ হওয়ায় রফিকের হোটেলের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন গরুর মাংসের ভূনা, রুটি আর ভাত খেতে আসতে শুরু করে। রফিক তার হোটেল আরও বড় করেন।

এখন প্রতিদিন প্রায় এক মণ গরুর মাংস, আধা মণ আটার রুটি ও দুই মণ চালের ভাত বিক্রি করেন রফিক। অন্য দিনের চেয়ে  শনি ও বুধবার হাটবারের দিনে দ্বিগুন বিক্রি হয় তার। গরীব ও অসহায় মানুষ এলে তাদের বিনামূল্যে মাংস-ভাত খাওয়ান।

২০১৬ সাল থেকে রমজান মাসে বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি খাওয়ানো শুরু করেন রফিক। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি রমজানে এই প্রচলন চালু রেখেছেন।

রমজান মাসে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোজাদার ইফতার ও সেহরি খেতে আসেন। তাদের মধ্যে বেশি ভাগই বাইরের লোকজন। কেউ হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন, আবার কেউ বিভিন্ন কাজে এসে আটকা পড়েছেন, কেউ বাসায় একা থাকেন রান্নার লোক নেই। কিছু লোকজন রমজানের সারা মাসই রফিকের হোটেলে সেহরি খেয়ে রোজা রাখেন।

বুধবার (২০ মার্চ) ইফতারির সময় গিয়ে দেখা যায়, রফিকের হোটেলের ভেতরে ও বাইরে চেয়ার-টেবিলে ইফতারির প্লেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রোজাদাররা ইফতারির প্লেটের সামনে এসে বসছেন। অনেকেই জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও ইফতার করছিলেন।

এর আগের দিন সেহরির সময় দেখা যায়, হোটেলে ২০-২৫ জন সেহরি খাচ্ছিলেন। হোটেলের মালিক রফিকুল নিজেই সেহরি খাবার পরিবেশন করছিলেন। তাকে আরও ২ জন সহযোগিতা করছিলেন।

নওগাঁর বদলগাছির শহিদুল ইসলাম ইফতার করতে এসে বলেন, “বাড়ির বাজার করতে কলেজ বাজারে এসেছিলাম। ইফতারের সময় হওয়ায় রফিকের হোটেলে ইফতারি করেছি। আমরা একসঙ্গে প্রায় ৭০-৮০ জন গরুর মাংস ও পোলাও দিয়ে ইফতার করেছি। ইফতারি অনেক সুস্বাদু ছিল।”

আক্কেলপুর কলেজ বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন বলেন, “রফিক হোটেলে প্রতিবছর রমজান মাসে রোজাদারদের বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন এখানে অনেক লোকজন আসে। ভালো কাজের জন্য অনেক বেশি টাকা-পয়সা লাগে না, ভালো মন হলেই হয়।“

গোপীনাথপুর বারইল গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সেহরির সময় ভাত খেতে পারব না। হাসপাতালের একজন নার্স বললেন সেহরির সময় কাঁচা বাজারের রফিকের হোটেল খোলা থাকে। গিয়ে দেখি অনেক লোকজন সেহরি খাচ্ছিলেন। আমিও পছন্দ মতো গরুর মাংস আর ভাতের অর্ডার করি। সেহরি খাওয়া শেষে টাকা দিতে গেলে হোটেলের মালিক টাকা নেননি।”

আক্কেলপুর পৌরসভার চার নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর আমিনুর ইসলাম পল্টু বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখছি রমজান মাসজুড়ে রফিক হোটেলে রোজাদারদের ফ্রিতে ইফতার ও সেহরি খাওয়ায়। রফিকের এমন মহতি উদ্যোগে আমরা গর্বিত।”

হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ১৭ বছর ধরে হোটেলের ব্যবসা করছি। আল্লাহ তালা আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন।  ২০১৬ সাল থেকে রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারি ও সেহরি খাওয়াচ্ছি। ১১ মাস ব্যবসা করে রমজানের জন্য টাকা জমিয়ে রাখি। সেই টাকায় পুরো রমজান মাসে ইফতার ও সেহরি খাওয়াই। প্রতিদিন ৮ কেজি গরুর মাংস আর ১৬ কেজি চালের বিরিয়ানী রান্না করা হয়।  প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোজাদার ইফতার ও সেহরি খান। রমজান মাসে এমন সেবা দিতে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। যতদিন বেঁচে থাকব, ইনশাআল্লাহ ততদিন রমজান মাসে বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি খাওয়াব।” 

Link copied!