কখনো পাইলট, কখনো পুলিশের বড় কর্মকর্তা পরিচয়ে গত ৪ বছরে ১৪টি বিয়ে করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের মো. আবু সাঈদ। ৩০ বছর বয়সী সাঈদ বিয়ের পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে স্ত্রীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তার নামে একাধিক মামলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে পলাতক।
আবু সাঈদ উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের তালবারিয়া গ্রামের মো. সোহেল রানার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু সাঈদ ছোটবেলা থেকেই বেশ ধূর্ত। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গুরুদাসপুর উপজেলার একটি ক্লিনিকে দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ওই ঘটনার পর থেকেই গত চার বছর এলাকায় দেখা যায়নি তাকে। তবে সশরীরে তাকে দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে নিয়মিত দেখা যায় তাকে। কখনো পাইলটের পোশাকে, কখনো পুলিশের পোশাকে।
গ্রামে তার বাবা সোহেল রানার একটি স্টুডিওর দোকান রয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে গত চার বছরে দেখা করতে আসেননি সাঈদ। তবে বিভিন্ন সময়ে দূরদূরান্ত থেকে আবু সাঈদের স্ত্রী পরিচয়ে অনেক মেয়ে তার সন্ধানে আসে। গত ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে স্বামী আবু সাঈদের সন্ধানে টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন পাঁচ নম্বর স্ত্রী দাবি করা খাদিজা আক্তার সাবিনা নামে এক নারী।
খাদিজা আক্তার সাবিনা জানান, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে টিকটকে পরিচয় হয় আবু সাঈদের সঙ্গে। তখন তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে। তার বাবা-মা কেউ নেই। এতিমখানায় বড় হয়েছেন তিনি। এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হয়। একপর্যায়ে আমাদের ১৫ লাখ টাকা দেন-মোহরে বিয়ে হয়। টাঙ্গাইল সদরে আমার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। এছাড়াও একটি এনজিও পরিচালনা করি। বিয়ের পর আবু সাঈদের ওপর আমার বিশ্বাস তৈরি হয়। এ কারণে আমার দুই বোন ও এক ভাতিজিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাঈদ ৩০ লাখ টাকা চান, আমরা তাকে সেই টাকা দিই। কয়েক দিন পর আমার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা নেন তিনি। কিছুদিন পরে তিনজনকেই নিয়োগপত্র দেন এবং বলেন তিন মাস পর চাকরিতে যোগদান করতে হবে।’
আবু সাঈদের প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি বেগম বলেন, সাঈদ ১৪ জনকে বিয়ে করেছে। বর্তমানে সে পলাতক।
আবু সাঈদের প্রথম স্ত্রীর বাড়ি জামালপুরের মাউশি এলাকায়। ২০১০ সালে তাকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষে দুটি ছেলে রয়েছে আবু সাঈদের।
দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়া’র বাড়ি রাজশাহী শহরে। তিনি একজন সংগীত শিল্পী। ২০১২ সালে তাদের বিয়ে হয়।
তৃতীয় স্ত্রী কবিতার বাড়ি পাবনার চাটমোহর এলাকায়। তাকেও ২০১২ সালে বিয়ে করেন সাঈদ।
চতুর্থ স্ত্রী সাথী। তিনি বসবাস করেন ঢাকাতে। ২০১৩ সালে তাদের বিয়ে হয়।
পঞ্চম স্ত্রী খাদিজা আক্তার সাদিয়া। তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায়। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।
ষষ্ঠ স্ত্রী শাপলা খাতুনের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়। তাদের ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর বিয়ে হয়।
সপ্তম স্ত্রী মিতার বাড়ি রাজধানীর রামপুরায়। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের হয়।
অষ্টম স্ত্রী আইরিন আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইল মধুপুরে। ২০২২ সালে তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।
চট্টগ্রামে নবম স্ত্রী সুমি আক্তারে বাড়ি। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তাকে বিয়ে করেন।
দশম স্ত্রী তিশা আক্তার ঢাকার সাভারের মেয়ে। তাদের বিয়ে হয় ২০২৩ সালে।
১১তম স্ত্রী সোয়ামনি নারায়ণগঞ্জ জেলার মেয়ে। ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ে করেন সাঈদ।
১২তম স্ত্রী রানীর বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি থাকেন ঢাকার সাভারে। বিয়ে হয় ২০২১ সালে।
১৩তম স্ত্রী প্রিয়াংকার বাড়ি বরিশালে। ২০২৪ সালে বিয়ে হয়।
১৪তম স্ত্রীর নাম আনারকলি। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। বর্তমানে বাস করছেন গাজীপুরে। বিয়ে ২০২৪ সালে।