• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

সাফ শিরোপা জয়ে সাতক্ষীরার ৩ কন্যার অবদান


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম
সাফ শিরোপা জয়ে সাতক্ষীরার ৩ কন্যার অবদান

টানা দুইবার নারী সাফ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের এটি টানা দ্বিতীয় শিরোপা।

২০২২ সালে যেখানে রচিত হয়েছিল নতুন গল্প, নেপালের সেই দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই ফের গল্পের নতুন অধ্যায় লিখল বাংলাদেশ।

নতুন এই অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সাতক্ষীরা। কেননা সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অধিনায়ক সাবিনা, মাছুরা ও আফঈদা খন্দকার প্রান্তির বাড়ি এই জেলায়। ইতোমধ্যে এই তিন কৃতি খেলোয়াড়ের নিজ জেলায় শুরু হয়েছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকায় জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়ি। সরু আঁকাবাঁকা এবড়োখেবড়ো পথ ধরে যেতে হয় তাদের বাড়ি। সাবিনার বাবা মো. সৈয়দ আলী গাজী ২০২০ সালে মারা যান।

অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সেজ বোন শিরিনা খাতুন বলেন, “সাফ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমাদের খুবই ভালো লাগছে এবং পরিবারের সবাই অনেক খুশি। সাবিনা অবশ্যই আমাদের সাতক্ষীরার গর্ব। আমাদের ছোটবেলাটা সংগ্রামের। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে সাবিনা খেলাধুলার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিল। সে সব খেলায় অংশ নিত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় সে আকবর স্যারের ফুটবল কোচে খেলা শুরু করে। বাবা ভাঙারির ব্যবসা করতেন। সাতজনের সংসারে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বাবার সামান্য আয়ে তিন বেলা ঠিকমতো খাওয়া জুটত না। খেয়ে না খেয়ে সাবিনা খেলা চালিয়ে গেছে নিয়মিত। স্কুল ড্রেস ব্যাগ, খেলার ড্রেস ছিল না তার তারপরও সে খেলা চালিয়ে গেছে।”

সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরারা নতুন বাড়ি করেছেন। সরকারের দেওয়া আট শতক জমির ওপর বাড়ি বলতে ইটের দেওয়ালের ওপর টিনশেডের দুই কক্ষের ঘর।

সাংবাদিকরা বাড়িতে গেলেও তার পরিবার দরজা খোলেনি। দরজার ওপাশ থেকে বলা হয়, মাসুরা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত কথা বলবেন না কারও সঙ্গে।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা আফঈদা। খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্সের ছোট কন্যা তিনি। তার বাবা একজন ক্রীড়া সংগঠক। প্রান্তি ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে ফুটবল অনুশীলন করতেন।

খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স বলেন, “বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিমে সাতক্ষীরার তিন কৃতি সন্তান রয়েছে। তিনজনই কিন্তু এই জয়ের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে কারণে বাংলাদেশ কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ২০২২ সালে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতা কিন্তু আজকে এই বাংলাদেশের মেয়েরা। নবীন এবং পুরাতনদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ টিম তারা আবারও প্রমাণ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে বাংলাদেশ আসলেই চ্যাম্পিয়ন।”

প্রিন্স বলেন, “বাবা হিসেবে আমি আমার মেয়েদের ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার জন্য তাদের পেছনে শ্রম দিয়েছি। আমি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্ষিপ্ত করে তাদের সময় দিয়েছি। যখনই সময় হয় তখনই তাদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার সাফ টুর্নামেন্টে আমার মেয়ে প্রথম অংশগ্রহণ করেছে এবং সে গোল করতেও সক্ষম হয়েছে। বাবা হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত, আমার পরিবারও গর্বিত। সাতক্ষীরাবাসী আমাদের যেভাবে উৎসাহিত করেছে তা অকল্পনীয়।“

ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান বাবু বলেন, “সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ আবারও গৌরব অর্জন করেছে। পরপর দুটি সাফ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ গৌরব অর্জন করল। এই দলে আমার নিজ জেলা সাতক্ষীরার তিন কৃতি খেলোয়াড় রয়েছে। যার মধ্য বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দানকারী সাবিনা, মাসুরা ও প্রাপ্তি। তিনজন খেলোয়াড় সাতক্ষীরা থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে চলছে। এই বিজয় নতুনভাবে উদযাপন করবে বাংলাদেশের মানুষ। কারণ মেয়েরা আমাদের গৌরবের জায়গায় নারী ফুটবল টিমকে আবারও চ্যাম্পিয়ন করেছে। আমাদের মেয়েদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা এবং অভিনন্দন।”

Link copied!