“রাতে ঘুমানোর সময় যখন কোনো নেভি শিপ যেত, তখন জলদস্যুরা আরও সতর্ক হয়ে যেত। তখন তারা বিশেষ করে আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে রাখত। যে কারণে নেভি শিপ গেলে আমাদের আরও সমস্যা হতো। ট্রিগার টেনে অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করত। সব চেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে ঘুম থেকে উঠলে চোখ খুললেই দেখতাম অস্ত্র আমার দিকে তাক করা।”
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রোমহর্ষক এ বর্ণনা দেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু।
রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে।
জিম্মি থাকা ৩৩ দিনের স্মৃতিচারণ করে রাজু বলেন, “শেষ যখন ওরা জেনেছে, আমরা মুসলিম ছিলাম, তখন আমরা কিছুটা ছাড় পেয়েছি। মুসলিম হিসেবে ঈদের দিন ওরা আমাদের ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার সুযোগ দিয়েছে। ঈদের দিন জলদস্যুরা আমাদের ইঙ্গিত দেয় দু-এক দিনের মধ্যে আমাদের মুক্তিপণ আসবে। এরপর সহসায় আমাদের মুক্তি মিলবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, “মুক্তিপণ কত দিয়েছিল, এটা শুধু কোম্পানি আর বাংলাদেশ সরকার জানে। এ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে আমরা বড় বড় তিনটি ব্যাগ জাহাজে ওপর থেকে পড়তে দেখেছি।”
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের নাবিক রাজু প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরেন। ওই সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতদিন পর রাজুকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা-বাবা। বাড়ির কেউ কেউ খুশিতে কাঁদতে থাকেন। এখন পরিবারে উৎসবের আমেজ বইছে।
নাবিকদের দ্রুত সময়ে মুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নাবিকের স্বজনরা।
ছেলের ফিরে আসার দিনক্ষণ আগেই জানা ছিল মা-বাবার। রাজুর বন্ধুরা চট্রগ্রাম থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন মা-বাবাসহ স্বজনরা। এতে অবসান ঘটে এক দীর্ঘ উৎকন্ঠার। একইসঙ্গে পরিবারে লাগে উৎসবের আমেজ। সুস্থভাবে বাড়িতে ফিরতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন রাজু।