• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আঁধার দূর করার আরেক নাম ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম
আঁধার দূর করার আরেক নাম ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়গুলোতে পাবনা জেলা সদর রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে বরাবরই মন্ত্রীত্ব স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। জেলার সংসদীয় আসনের পাবনা- ১, পাবনা-২ ও পাবনা-৪ আসন থেকে প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হলেও বরাবরই মন্ত্রীত্ব স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিল পাবনা-৫ (সদর) সংসদীয় আসনটি।

দীর্ঘদিন পর হলেও বড় প্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণের এই আঁধার কাটার আরেক নাম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে।  

ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বিচার বিভাগে যোগদান এবং পরে দুদকের কমিশনার হয়েছিলেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পাবনার এই কৃতি সন্তান আজ দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। সব আয়োজন শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

জানা যায়, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হন। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কারাবরণ করেন।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা–কর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।  ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক পুত্র সন্তানের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব।

এদিকে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পাবনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় পাবনায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন নেতাকর্মীরা। আনন্দ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষও।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই পাবনা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লালের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানসহ পথচারীদের মাঝে মিষ্টি বিরতরণ করা হয়। পাবনা থেকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ।

রোববার দুপুরে পাবনা শহরে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, “রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার খবরে পাবনা জেলা সদরের আজ আঁধার কাটলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়গুলোতে অনেক সরকার আসছে। কিন্তু পাবনা জেলা সদরের ভাগ্যে জোটেনি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য মানুষকে যোগ্য পদ দিয়ে উত্তর জনপদের প্রাচীন এই জেলাকে আবারো দেশের মধ্যে আলোচিত করে দিলেন।”

এদিকে রোববার দুপুরে গণমাধ্যমককে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাষ্ট্রপতি পদে তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।”

অন্যদিকে, দুপুর ২টার দিকে আনন্দ মিছিল করেন সাহাবুদ্দিনের কৈশরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরএম একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষ ও সভাপতির নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, “সাহাবুদ্দিন খুবই ভাল, সৎ ও পরিচ্ছন্ন মনের মানুষ। তিনি অনেক দক্ষ ও মেধা সম্পন্ন মানুষ। তার রাজনৈতিক জীবনেও অনেক ইতিহাস রয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আশির্বাদ পেয়েছিলেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম, আব্দুর রহিম পাকন, ফজলুল হক মন্টু, আব্দুল হামিদ মাস্টার আমরা সবাই একসাথে রাজনীতি করেছি। তখন দেখেছি কতটা ন্যায়পরায়ন ছিলেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই তিনি একজন সঠিক মানুষকে রাষ্ট্রপতি পদে বেছে নিয়েছেন।”

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, “তিনি ১৯৭৫ সালে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। তখন প্রেসক্লাবের সদস্য লাভ করেন। প্রেসক্লাবের সঙ্গে তার আত্মিক একটা সম্পর্ক রয়েছে। প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের তিনি ভালবাসেন, প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিকরাও তাকে ভালবাসেন। এজন্য এখন পর্যন্ত তিনি এই প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। তিনি প্রেসক্লাবের উন্নয়নে সবসময় পাশে থেকেছেন। প্রেসক্লাবের কল্যাণ তহবিল তার পরামর্শে ও সহযোগিতায় চালু হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করায়। কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীকে।”

সাহাবুদ্দিন চ্প্পুুর পাবনার বাসভবনের পাশে বসবাসকারী প্রতিবেশি বাচ্চু প্রামানিক বলেন, “তিনি আমার প্রতিবেশি। এখানেই তার বাড়ি। ঢাকা থেকে পাবনায় আসলেই তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন, খোঁজখবর নেন। কারো কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সমাধান করেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী একজন মানুষ। তিনি রাষ্ট্রপতি মনোনীত হওয়ায় আমরা খুব খুশি।”

একই এলাকার পাশেই বসবাসকারী সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ছোট বোন ফারজানা মহিউদ্দিন বলেন, “পরিবারের মধ্যে তিনি সবার বড়। যে কারণে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো পরিবারকে তিনি আগলে রাখেন। তার মতো এত সুন্দর মনের মানুষ আর হয় না। ভাই হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে তিনি তুলনাহীন। তিনি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের খোঁজখবর রাখেন সবসময়। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, উৎফুল্ল আমার ভাই আজ এত বড় একটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেন এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ কৃতজ্ঞতা “

সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর স্মৃতি বিজরিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাধানগর মজুমদার একাডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন বলেন, “জনাব সাহাবুদ্দিন আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ায় আজ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৌরাবান্বিত হলো।”

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বাল্যবন্ধু ও বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় খুশির খবর আমার বাল্য বন্ধু সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর এই প্রাপ্তি। আমার জীবনের সেরা আনন্দ। এর চাইতে খুশি কোনো দিন হইনি। ওর এই অর্জনে বন্ধু হিসেবে ও পাবনাবাসী হিসেবে আমি গর্বিত। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন খবর কার না ভালো লাগে।”

Link copied!