হতদরিদ্র আব্দুর রাজ্জাক ও কমেলা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে মোহাম্মদ রাসেল চলতি সেশনে রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রাবিতে গুচ্ছর ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া আর ডুয়েটে প্রিলিমিনারিতে টিকেছেন। এসএসসিতে গোল্ডেন এ এবং এইচএসসিতে ৯০ শতাংশ নম্বর নিয়ে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। অথচ ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে রীতিমতো দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে রাসেলের পরিবার।
মোহাম্মদ রাসেলের বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের তৈলকুন্ডু গ্রামে। পরিবারে বাবা-মাসহ রাসেলের ছোট দুই বোন রাবেয়া খাতুন নবম শ্রেণি ও খাদিজা খাতুন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। রাসেলের বাবা আব্দুল রাজ্জাক ফেরি করে বাদাম ও নিমকি বিক্রি করেন। তা দিয়েই অভাবে-অনটনে চলে তার সংসার।
আব্দুল রাজ্জাক বলেন, “দারিদ্র্যের মাঝেও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার হাল ছাড়িনি। খাবার সংকট, কাপড়চোপড় সংকট, খাতা-কলম কিনে দিতে পারি না। তারপরও কষ্টের মধ্যেই ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেলেও আদৌ পড়ালেখা করাতে পারব কি না, এটা নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছি। আমার ছেলের মাথা বেশ ভালো।”
বোনকোলা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হুদা বলেন, “রাসেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। দরিদ্র ঘরের সন্তান হলেও সে এবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ভালো করেছে। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই রাসেলের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই আমি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন তারা যদি রাসেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেন, তাহলে রাসেল একদিন দেশে জাতীয় মানবসম্পদে পরিণত হবে বলে বিশ্বাস করি।”
রাসেল বলেন, “আমি খুবই দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছি। আমার পরিবারের পাঁচ সদস্য। দারিদ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। খুবই কষ্টকর দিন কাটে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় বাবা-মা অনেক আশা করেছে, আমিও স্বপ্ন দেখছি। আমি রুয়েটে মেকানিক্যাল সাবজেক্ট পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হাওয়া। আমার বাবার সাধ্য নেই আমাকে পড়ানো। তাই আমি দেশের বিত্তবান বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রার্থনা করছি।”