• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেরপুরে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
শেরপুরে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

শেরপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বেরিয়ে আসছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। জেলা কৃষি দপ্তর বলছে, চলতি বন্যায় কৃষিতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা।

কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজার ৭১টি। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার অন্তত পৌনে দুই লাখ কৃষক।

বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলেও পাহাড়ি ঢল এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পায়নি। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ঘর-বাড়ি ও ক্ষেত খামারের বিধ্বস্ত রূপ ভেসে উঠছে। গত দুই দিনে পানি কিছুটা কমলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এলাকাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সঙ্কট। গৃহপালিত গরু-মহিষসহ গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। ফলে একদিকে খাদ্য সঙ্কট, অন্যদিকে মাথার ওপর চাল না থাকায় বহু মানুষ চরম কষ্টে রয়েছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, বর্তমানে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলাসহ সদর উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। এতে আগামী ২-১দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের সাড়ে ৯৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ টাকার অংকে ৫০০ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় ৪৩ হাজার গরু, ৪৬০ মহিষ, ৭১ হাজার ছাগল-ভেড়া, ৫ লাখ ৮ হাজার মুরগি ও ১৮ হাজার হাঁস ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে অনেক প্রাণী খাদ্যসঙ্কটে পড়েছে এবং নানা রোগব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডা. এবিএম আব্দুর রউফ আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামারিদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া খাদ্য সঙ্কট নিরসনে দুর্গত এলাকায় তিন টন গোখাদ্য বিতরণ করা হবে।

এ সম্পর্কে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। 

Link copied!