বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় সদ্য নির্মিত একটি সড়ক হস্তান্তরের আগেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে রাস্তার দুইপাশ। তবে পাথরঘাটা এলজিইডির কর্মকর্তা বলছেন, রাস্তাটি এখনো হ্যান্ড ওভার করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে হরিণঘাটা ইকোপার্কের আগে জাফরের দোকান নামক স্থান পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে তিন মাস আগে। এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে পিচ ঢালাই উঠে ইট সুরকি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙে গেছে।
পাথরঘাটা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুত করণের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার দেওয়া হয়। এলজিইডির এই কাজটি করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ নামের এক ঠিকাদার কাজটি পান। সেখান থেকে সাব কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজের দায়িত্ব পান বরগুনার দুই ঠিকাদার শাহিন ও শহিদুল ইসলাম মৃধা।
সড়কটির কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তবে এলাকার কিছু প্রভাবশালীর চাপে তারা কিছু করতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, কাজ করার সময় নিম্ন মানের খোয়া বিছিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছিলো রাস্তার কাজ। ঠিকাদাররা চুলার মাটির মতো ইট সুরকি ব্যবহার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মজিবুর রহমান কালু বলেন, “আগেরবারও নিম্ন মানের খোয়া ও বালু দিয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন অনেক জায়গা দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাস্তাটি নতুন করে হতে দেখে অনেকেই ভেবেছিল এই বুঝি কষ্টের দিন শেষ। কিন্তু তিন মাসের ব্যবধানে রাস্তার দুইপাশ ক্ষয়ে পড়তে শুরু করেছে।”
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারের প্রধান সাব-কন্ট্রাক্টর মোহাম্মদ শাহিনকে তার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, শিডিউল মেনেই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা এলজিডির উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাছে এখনো কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিকাদার রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি না দেওয়ায় দুইপাশ ভেঙে গেছে। রাস্তা হ্যান্ড ওভারের আগ পর্যন্ত সকল দায়ভার ঠিকাদারের। তারা রাস্তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।”
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা বলেন, “সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বৃষ্টিতে পিচ ঢালাই উঠে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ভেঙে গেছে। বিষয়টি পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ না করতে বলা হয়েছে।”