• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বান্ধবীকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেন ঋতু, মারা গেলেন দুজনই


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৩, ০১:০৪ পিএম
বান্ধবীকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেন ঋতু, মারা গেলেন দুজনই

সময়টা দুপুর সাড়ে ১২টা। মুষলধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ক্লাস রেখে ক্যাম্পাসের লেক পাড়ে গিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মোবাশ্বেরা তানজুম হিয়া  (২০) ও তাসফিয়া জাহান ঋতু (২০)। বৃষ্টিতে ভেজা শেষে লেক পাড়ের একটি নারকেল গাছে জুতা খুলে রেখে পানিতে পা ধুতে নামেন দুই বান্ধবী। দুজনের কেউই সাঁতার জানতেন না। এ সময় হিয়া পা পিছলে লেকের পানিতে পড়ে যান। লেকের গভীরতা অনেক হওয়ায় মুহূর্তেই ডুবে যান তিনি। বান্ধবীকে বাঁচাত পানিতে ঝাঁপ দেন ঋতুও। ডুবে যান তিনিও।

ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা দ্রুতই তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। আধঘণ্টা পর উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা নিহতের সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিকেলে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত মোবাশ্বেরা তানজুম হিয়ার বাড়ি খুলনার বড়বাড়ি এলাকায় ও তাসফিয়া জাহান ঋতুর বাড়ি বাগেরহাট জেলার  ফকিরহাটের মাসকাটা এলাকায়। দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে ছিলেন কাছের বন্ধু। একসঙ্গে থাকতেন শহরের নবীনবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিব হোসেন বলেন, “হিয়া ও ঋতু খুব ভালো ছাত্রী ছিলেন। ক্লাস মেধাবীদের মধ্যে তারা দুইজন রয়েছেন। খুব মিশুকও ছিলেন তারা। তাদের এই করুন মৃত্যুতে আমাদের বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষক হিসেবে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী রুমিন রহমান বলেন, হিয়া ও ঋতু খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে তারা একসঙ্গে থাকতো। একেবারে বোনের মতো।

নিহতদের উদ্ধারে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ বলেন, “ওদের চিৎকার শুনে এসে দেখি দুজনে ডুবে গেছে। ওদের বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, “খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহাবুব বলেন, “দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছি। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে খেয়ার করা হবে।”

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শীতল চন্দ্র পাল বলেন, বিকেলে স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিহতদের মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
 

Link copied!