খুলনার দাকোপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি পোল্ডারের মধ্যে দুইটি পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ধারাবাহিক ভাঙনের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এ সব নদী পাড়ের জনবসতীর মানচিত্র। অতি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত না করলে যেকোনো মুহুর্তে বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে। আর এতে চলতি আমন মৌসুমে ধানের চারা রোপন ব্যাহতসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে তিনটি পৃথক দ্বীপের সমন্বয়ে দাকোপ উপজেলা গঠিত। এখানে সারা বছর ধরে চলে ভয়াবহ নদী ভাঙন। প্রতিনিয়ত এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা ভাঙনের কবলে পড়ে তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। শুধুমাত্র নদী ভাঙনের কারণে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন।
উপকূলীয় এই উপজেলার চারপাশ জুড়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদীর মধ্যে রাক্ষুসী শিবসা, ঢাকী, চুনকুড়ি, পশুর, ঝপঝপিয়া ও মাঙ্গা নদীর ভাঙন এখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি পোল্ডারের ৩১ নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে রয়েছে চালনা পৌরসভা, পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন। ৩২ নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে কামার খোলা ও সুতারখালী ইউনিয়ন। ৩৩ নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব ও বানিশান্তা ইউনিয়ন। এর মধ্যে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫০ কোটি টাকা ঋণে নির্মিত হয়েছে টেকসই নতুন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ। কাজটি বাস্তবায়ন করেছে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যা এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু ৩২ নম্বর পোল্ডারের কালাবগি আমিনুল সানার বাড়ির সমানে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন ও গুনারী কালিবাড়ির পূর্ব পাশে ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট বাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫০ কোটি টাকা ঋণে নির্মিত বেড়িবাঁধ পোল্ডারবাসীর কোনো কাজেই আসেনি। বরং মেগা প্রকল্পের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে। এছাড়া ৩১ নম্বর পোল্ডারের লক্ষ্মীখোলা পিচের রাস্তার মাথায় প্রায় ১৫০ ফুটসহ জাবেরের খেয়াঘাট ও গতবারের ভাঙন কবলিত খলিসা এলাকার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
গুনারী এলাকার সন্তোষ সরদার জানান, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে টেকসই ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না। যে কারণে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধের গুনারী কালিবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়লে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে। এ জন্য দায়সারা মেরামত কাজেও অনেক বিলম্ব হয়। অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত না করলে যেকোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ৩২ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেকসই নতুন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। যা এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু তার আগেই বেড়িবাঁধের কয়কটি স্থান ভয়াবহ ভাঙনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমান সে সব স্থানে বালির বস্তা ফেলে মেরামত কাজ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কালাবগি আমিনুল সানার বাড়ির সামনে ভাঙনে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “পানখালী ইউনিয়নের লক্ষ্মীখোলা পিচের রাস্তার মাথায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের পাশে আমাদের আরেকটা কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি হয়ে গেলে ওই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করব। আর কালাবগির বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। যেহেতু চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ আমাদের কাছে এখনো হস্তান্তর করেনি। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”