এবার শুধু কাদামাটির বদলে ধান দিয়ে দুর্গাপূজায় ব্যতিক্রমী প্রতিমা তৈরি করে চমক দেখালেন দুই প্রতিমাশিল্পী। নওগাঁর প্রতিমা কারিগর বিশ্বজিৎ পাল ও গোপাল চন্দ্র পাল এই প্রতিমা তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন। প্রতিমাটি নাটোর পৌর সদরের লালবাজারের কদমতলার রবি সূতম সংঘের পূজামণ্ডপের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০ কেজি ধান দিয়ে তৈরি এই প্রতিমা এবারই এই অঞ্চলে প্রথম বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
দর্শনার্থীরা বলছেন, সোনালি রঙের ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখে যেনো মনে হচ্ছে সোনা দিয়ে মোড়ানো। ছোট ছোট ধান বসানো হয়েছে পুঁতির মতো। দেখতেও লাগছে অপরূপ।
জানা গেছে, বহু বছর আগে স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র পাল নাটোর শহরের লালবাজারে প্রতিমা তৈরির একটি কারখানা গড়ে তোলেন। তার হাতের তৈরি প্রতিমার বেশ কদর ছিল। নিখুঁত হাতে চমৎকারভাবে প্রতিটি প্রতিমাকে শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলতেন তিনি। ফলে নাটোর জেলার বাইরেও তার হাতের তৈরির বিভিন্ন দেবীর প্রতিমার বেশ চাহিদা ছিল। তার মৃত্যুর পর অল্প পরিসরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন তার ছেলে বিশ্বজিৎ পাল এবং তার ছোট ভাই গোপাল চন্দ্র পাল। এ বছর তারা দুজনে মিলে ব্যতিক্রমী ধান দিয়ে একটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন। এ প্রতিমা তৈরিতে তারা ৫০ কেজি ধান ব্যবহার করেছেন। ১১ ফুট উচ্চতার এ দুর্গাপ্রতিমাটি ৯৫ হাজার টাকায় অর্ডার করেছেন। একটি একটি করে ধান গেঁথে দুর্গাপ্রতিমাটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ দিন।
ধানের প্রতিমা তৈরির কারিগর বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘আমরা দুজন প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এই প্রতিমা তৈরিতে আনুমানিক ৭০-৮০ হাজার হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে।’
গোপাল চন্দ্র পাল জানান, এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুরসহ আনুষঙ্গিক প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ ও বিচুলির ফ্রেম বা কাঠামো তৈরি করা হয়। পরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়। সেগুলো শুকিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মাটি নরম থাকতে প্রতিমাজুড়ে ধান বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধান এমনভাবে বসানো হয়েছে যাতে দেখলে মনে হবে প্রতিমাগুলো ধান দিয়েই তৈরি। এগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রতিমার কিছু কিছু অংশে বিভিন্ন রং স্প্রে করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “উত্তরাঞ্চলে প্রথম ধান দিয়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা আমরাই তৈরি করেছি। সবাই তো নতুনত্ব চায়। তাই সেই চিন্তা থেকে এ বছর ধান দিয়ে ১১ ফুট উচ্চতার দুর্গাদেবীর প্রতিমা বানিয়েছি। আগামী বছর বড় করে আরও প্রতিমা তৈরির ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, ধান দিয়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা সবার নজর কাড়বে। আগামীতে ধান দিয়ে বানানো দেবীর প্রতিমার সংখ্যাও বাড়বে।”
নাটোর জেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের ৭টি উপজেলায় ৩৫০টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর যার সংখ্যা ছিল ৩৯২টি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রসাদ কুমার তালুকদার বলেন, “পারিবারিকভাবে যারা দুর্গাপূজা করতেন তারা অনেকে এ বছর করছেন না। অনেকসময় একই মহল্লায় দুটি পূজা হয়েছে। সেই সব এলাকায় আমরা একসঙ্গে পূজা করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। ফলে মণ্ডপের সংখ্যা এ বছর কমেছে।”
এ বিষয়ে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে পূজা উদযাপন উপলক্ষে জেলাপর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।”