কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চার দিনের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে। চার দিনে দুই দফায় এ দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ধানের বাড়তি দামকেই দুষছেন মিলমালিকেরা।
তারা এ-ও বলছেন, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) থেকে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে আরও এক টাকা করে বাড়বে।
একাধিক মিলমালিক জানান, চার দিন আগে মিলগেটে প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ১ হাজার ৭০০ টাকা। তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৬৮ টাকা।
বুধবার এই চালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৭০ টাকা। আর গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭২ টাকায়। সেই হিসাবে, চার দিনে দুই দফায় প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম মিলগেটে চার টাকা বেড়েছে। মিনিকেট চালের জন্য কুষ্টিয়ার খাজানগর সারা দেশে পরিচিত। সেখানে ৬৪টি চালকলে এই চাল উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক মিনিকেট চাল ঢাকাসহ দেশের ৩৫ জেলায় সরবরাহ করা হয়।
মিলমালিকেরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৭ টাকা। ১০ অক্টোবর সেই দাম কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৬৬ টাকায়। এর পর থেকে এই চালের চাহিদা বাড়তে থাকে।
খাজানগরের গোল্ডেন রাইস মিলের মালিক জিহাদুজ্জামান জিকু বলেন, “এক সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চাল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ধানের দাম মণপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে ধানের দাম ছিল মণপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা, তা এখন ১ হাজার ৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে গত চার দিনে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে চার টাকা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার আরও এক টাকা দাম বাড়বে।”
কুষ্টিয়া পৌর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিলগেটের চেয়ে খুচরা বাজারে গড়ে দুই টাকা দাম বেড়েছে মিনিকেট চালের। শুক্রবার খুচরায় প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৭৪ টাকায়।
পৌর বাজারের মোল্লা স্টোরের মালিক সরোয়ার হোসেন বলেন, চার দিনে দুবার দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে।
পৌর বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটে তদারকি দুর্বলতার কারণে কয়েকজন মিলমালিক মিলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমনের এই ভরা মৌসুমে এভাবে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন প্রধান বলেন, “চালের দাম বাড়ছে, এটা ঠিক। কারণ, ধানের দাম অনেক বেড়েছে। ধানের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক দিনে চালের দাম আরও বাড়বে। বাড়তি দামেও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ধানের হাটবাজারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।”
কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, এবার ধানের ফলন কম হয়েছে। তাই ধানের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তারপরও চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা গুটিকয় মিলমালিকের কারণে। তারা করপোরেট চাল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
বাজার তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, “চালের দাম বাড়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে। কোথাও কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”