কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের সাদিপুর খেয়াঘাট এলাকা দুই দিন ধরে পড়ে ছিল একটি বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়ি। স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, কেউ হয়তো গাড়িটি রেখে পদ্মা পার হয়ে কোনো কাজে গিয়েছেন। কিন্তু শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে ওই গাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে গাড়ির ভেতর থেকে সম্রাট (২৬) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন হোসাইন। তিনি জানান, সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত সম্রাটের বন্ধু একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে (৩০) আটক করেছে ঈশ্বরদী থানার পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন নিহত সম্রাটের বন্ধু মমিন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জিয়াউর রহমান জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রসাটমের নিকিমত কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন সম্রাট হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আটটার দিকে সম্রাট তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারা দিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার খোঁজ না পেয়ে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার।
শনিবার সকালে পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাডো জিপের ভেতর থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনেরা গিয়ে মরদেহটি সম্রাটের বলে সনাক্ত করেন।
এর আগে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদীপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “ভোরবেলায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি দুই দিন ধরে একটি দামি গাড়ি শিলাইদহ নদীর পাড়ে দাঁড় করানো আছে। গাড়িটির কাছে যাওয়ার পর দুর্গন্ধ বুঝতে পেরে মেম্বারসহ পুলিশ প্রশাসনকে জানাই।”
নিহত ড্রাইভার সম্রাটের বাবা আবু বক্কার বলেন, “আমার ছেলে সম্রাট তার বন্ধু মমিন ও মমিনের স্ত্রী সীমাকে চাকরি দিয়েছিল। পরে তাদের চাকরি চলে যায়। আবারও তাদের শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেয়। আমার ছেলে নিকিমত কোম্পানিতে কয়েকটি গাড়ি ভাড়াও দিয়েছিল। প্রতি মাসে বড় অঙ্কের টাকা বিল তুলত। গেল বৃহস্পতিবার বিল হয়। কৌশলে আমার ছেলেকে স্বামী-স্ত্রী ডেকে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছি।”
এদিকে আটক মমিনের স্ত্রী সীমা পুলিশকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে। এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ওষুধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীরে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপানাঙ্গে আঘাত করলে সে মারা যায়। পরে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করার পর আমাকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়।”
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, “নিহত সম্রাটের পরিবার ও গাড়ির মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে বাঁশেরবাদা এলাকায় মমিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক মমিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়ায় কুমারখালি থানা-পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”