• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনুষ্ঠান চলাকালে রশিদিয়া দরবার শরিফ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৮:২৭ এএম
অনুষ্ঠান চলাকালে রশিদিয়া দরবার শরিফ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নে বার্ষিক অনুষ্ঠান চলার সময়ে রশিদিয়া দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরের পর ওই দরবার শরিফে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়নের সাদিপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু হামলার ভয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না দরবার শরিফের লোকজন।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। হামলার সময় ওই দরবার শরিফে বাৎসরিক ওরস মাহফিল চলছিল। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বয়েন এবং সাদিরপুর আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও ইউনিয়ন জামায়েতের আমির আবু তালেবের নেতৃত্বে এ হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এলাকাবাসী ও দরবার শরিফের লোকজন জানান, প্রায় ৭ বছর ধরে হযরত খাজা শাহসুফিয়া দেওয়ান আব্দুর রশিদ আল চিশতি নিজামি (রা.) এর স্মরণে প্রতিবছর ১৩ আশ্বিন সাদিপুর রশিদিয়া দরবার শরিফে বার্ষিক ওয়াজ ও মোনাজাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দরবার শরিফখানা পরিচালনা করেন স্থানীয় মৃত করিম মিস্ত্রির ছেলে মো. জিল্লুর রহমান (৬০)। প্রতিবারের ন্যায় রোববার এশার নামাজের পর শুরু হয় ওয়াজ মাহফিল। মাহফিলের বক্তব্য শেষে হুজুর যখন মোনাজাত শুরু করেন তখন এক দল নানা বয়সী লোকজন এসে প্রথমে দরবার শরিফে ভাঙচুর করেন। এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যান। এসময় তবারক ফেলে ভয়ে পালিয়ে যান দরবার শরিফের পরিচালক ও উপস্থিত ভক্তরা।

আতঙ্কে পালিয়েছেন রশিদিয়া দরবার শরিফের পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে পরিচালকের ছেলে রাসেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৭ বছর ধরে আমরা ১৩ আশ্বিন বার্ষিক ওয়াজ ও মোনাজাতের আয়োজন করে আসছি। প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ ভক্ত  উপস্থিত হতেন। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে মাত্র ১৫০ জনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত হয়েছিল ৮০ জনের মতো।

তার ভাষ্য, হুজুর ওয়াজ শেষে মোনাজাত শুরু করতে না করতেই শতাধিক লোকজন এসে প্রথমে ভাঙচুর করল। পরে দরবার শরিফে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।  

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের নাম পরিচয় আমি জানি। তবে এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে সাদিপুর বাজারের একাধিক ব্যক্তি বলেন, চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বয়েন এবং সাদিরপুর আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও ইউনিয়ন জামায়েতের আমির আবু তালেবের নেতৃত্বে দরবার শরিফে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বয়েন। তিনি বলেন, দরবার শরিফের নামে সেখানে মাদকের আড্ডা চলে। সেজন্য স্থানীয় ছেলে পেলে তা ভেঙে দিয়েছে। আমি ছেলেপেলেদের সে সময় ভাঙতে নিষেধ করেছি। এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। আর সেখানে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাদিপুর মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবু তালেব বলেন, ঘটনার সময় আমি অন্য একটি বাজারে ছিলাম। দরবারে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ফেসবুক থেকে জেনেছি।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় এ ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ।

এ বিষয়ে ওসি মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!