• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজশাহীতে আমগাছে সর্বোচ্চ মুকুল, বাম্পার ফলনের আশা


এম এম মামুন, রাজশাহী
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩, ০৯:৫৬ এএম
রাজশাহীতে আমগাছে সর্বোচ্চ মুকুল, বাম্পার ফলনের আশা

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে বেড়েছে আমবাগান। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান হয়েছে। বাগানে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুকুল এসেছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত মুকুল ঝরে পড়ার হারও কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহী জেলায় এবার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। গত বছর ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গত বছর আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এবার আমের গড় ফলনের পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া থাকলে প্রত্যাশার বেশি ফলনের আশা রয়েছে।

আম লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই রাজশাহীতে বাড়ছে আমের বাগান। বড় বড় বাগান কমলেও উন্নত জাতের নতুন আমবাগান বাড়ছে। কোথাও কোথাও আসতে শুরু করেছে গুটিও। কোনো ধরনের কেমিক্যালের প্রয়োগ ছাড়াই এমন সুস্থ-সবল মুকুলের সৌরভে বাগানিদের মুখে হাসি ফিরেছে। তারা প্রত্যাশা করছেন, মুকুলের সঙ্গে সঙ্গে এবার আমেরও বাম্পার ফলন আসবে।

আমচাষিরা জানান, শীতের জড়তা কাটিয়ে বসন্তের আগমনে ধীরে ধীরে উষ্ণ হাওয়ায় বাগানের প্রায় ৯৫ ভাগ গাছে আমের মুকুল শোভা পাচ্ছে। এ বছর ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছেন তারা। গত বছরও তারা কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়েছিলেন। দাম বেশি থাকায় তারা লাভবানও হয়েছিলেন।

দুর্গাপুর উপজেলা আমচাষি সোহেল রানা বলেন, “গাছে গাছে মুকুল শোভা পাচ্ছে। রোগবালাই থেকে বাঁচতে কীটনাশকসহ কিছু ওষুধ গাছে ছিটানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে আমের গুটি আসতে শুরু হবে। তাই এখন থেকেই গাছের যত্ন নেওয়া হচ্ছে।”

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা জানান, এ উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমগাছে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। মাত্র দুই-তিন বছর বয়স থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমের একটানা ফলন পাওয়া যায়। এ বছর দুর্গাপুরে ১ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা আমচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

রাজিয়া সুলতানা আরও জানান, দুর্গাপুর উপজেলার উৎপাদিত আমের গুণমান খুব ভালো। তাই এ উপজেলায় উৎপাদিত আমের চাহিদাও প্রচুর।

রাজশাহীর বাঘা এলাকার আমচাষি সাজেদুর রহমান। এবারও অনেক আগে থেকেই গাছের যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “রাজশাহীর বাঘার আম অনেক বিখ্যাত। এখান থেকে আম বিদেশেও যায়। এজন্য গাছে মুকুল আসার আগে থেকেই আমরা গাছে যত্ন নেওয়া শুরু করি। গত বছর গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল কিন্তু সেগুলো টেকেনি। এ বছরও যাতে সেই রকম কিছু না নয়, তাই শুরু থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিচর্যা নিচ্ছি।”

বাঘা উপজেলার সাদি এন্টারপ্রাইজ কয়েক বছর ধরে বিদেশে আম রপ্তানি করছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ২৫০ থেকে ৩০০ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। এবার শতভাগ গাছেই মুকুল এসেছে। তারা আম দেশের বাইরে রপ্তানি করেন, তাই তারা আমগাছের বাড়তি পরিচর্যা করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সেই পরিচর্যার প্রক্রিয়াগুলো কিছুটা সহজ ও সাশ্রয়ী বলেও জানান তিনি।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, “আমের কলম রোপণের দুই-তিন বছরের মধ্যে গাছে মুকুল ও ফল আসে। প্রতিটি গাছে দীর্ঘ সময় ধরে আম পাওয়া যায়। এই উপজেলার মাটিও আম চাষের জন্য খুব উপযোগী।”

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “রাজশাহীতে আম চাষের জন্য যে আবহাওয়াকে অনুকূল হিসেবে ধরা হয়, এখন তা শতভাগ রয়েছে বলা যায়। এ কারণে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। এবার বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।”

Link copied!