রাজশাহীতে বাড়ছে ডেঙ্গু ঝুঁকি। গত এক সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা করে ৩৮ শতাংশ পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ক্ষতিকর এডিস মশা মাত্র ১৩ শতাংশ। ব্রুটো ইনডেক্স (এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক) রয়েছে ৪৬ শতাংশেরও ওপরে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ব বিভাগের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ ধরে নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডে ৭৫টি স্থানের লার্ভা সংগ্রহ করা হয়েছে। নগরীর ৭, ৮, ১০, ১৩ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন আবাসস্থল থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত ৭৫টি স্থাপনার মধ্যে ২৮টিই মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। সে অনুসারে নগরের ৩৮ শতাংশ স্থাপনায় রয়েছে এডিস মশার লার্ভা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি হলে সে অঞ্চলকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। আর রাজশাহী নগরীতে ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সে হিসেবে রাজশাহী ‘অধিকতর ঝুঁকির’ মধ্যে রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসিবুল আহসান তালুকদার বলেন, “আমরা একটি জরিপ চালিয়েছি। সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৫টি করে স্থাপনা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ডে মোট ৭৫টি স্থাপনার মধ্যে ২৮টিতেই আমরা এডিস মশার লার্ভা পেয়েছি। যদিও এসব লার্ভার ১৩ শতাংশ মশা ক্ষতিকর।”
হাসিবুল আহসান তালুকদার আরও বলেন, “আমাদের এখান মশা ও এর জীবাণু আছে। ঢাকা থেকে আগত রোগীও আছে। ফলে এটি ছড়িয়ে পড়তেই পারে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড, স্যালাইন, ডেঙ্গু পরীক্ষার সবধরনের উপকরণ আছে। বিভাগের ৬৪ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ওষুধ সরবরাহ আছে।”
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বিভাগীয় এ স্বাস্থ্য পরিচালক। তিনি বলেন, তারা যাতে আরও সতর্ক হতে পারেন এজন্য চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, “নগরে এডিস মশার লার্ভা সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠি পাওয়ার আগেই আমরা বিভিন্ন ধরনের সভা করেছি। সবাইকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানো, কোনো জায়গায় যেন পানি জমে না থাকে, ড্রেনগুলোর পানি যেন প্রবাহ থাকে, লার্ভিসাইড ওষুধ ব্যবহারসহ সবকিছুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
আঞ্জুমান আরা বেগম আরও বলেন, “আমাদের নগরীর মাত্র চারজন রোগী ডেঙ্গু পজিটিভ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তারা সবাই ঢাকা থেকে এসেছেন। রাজশাহীতে যেহেতু এডিস মশার প্রজনন খুঁজে পাওয়া গেছে, এজন্য আমরা আরও সাতদিন মানুষকে সচেতন করবো। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।”
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বুধবার থেকে সিটি করপোরেশন পরিচালিত ১২টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু হয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত যে কেউ এ কেন্দ্রে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারবেন। এজন্য ওই ব্যক্তিকে কিটের মূল্য ১৬০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার সব উপকরণ ও ওষুধ সরবরাহ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোলা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। গত একমাসে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মারা গেছে একজন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫ জন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড রাখা হয়েছে। সেখানেই সবধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ৫ সদস্যের চিকিৎসক টিমও গঠন করা হয়েছে।