সংকটে রাজবাড়ীর তাঁতিরা


রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ১০:০০ এএম
সংকটে রাজবাড়ীর তাঁতিরা

রং, সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত দাম না পাওয়া এবং অর্থ সংকটের কারণে রাজবাড়ী সদর ও কালুখালী উপজেলার তাঁতশিল্পীদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। চরম দুর্দিনে থাকা তাঁতিরা এই পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। যে কারণে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি।

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চরসিলোকা, পুরানকালুখালী, মৃগী পাড়া বেলগাছি, হামরাট, সরিষাডাঙ্গাসহ ১২টি গ্রামে প্রায় ১৫০০ তাঁতকল ছিল। এসব তাঁতপাড়ায় উৎপাদন হতো গামছা ও লুঙ্গি। এসব তাঁতকলে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক জড়িত ছিলেন। তাঁতশিল্পে যেসব উপকরণ দরকার যেমন রং, সুতাসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এছাড়া একটি কাপড় তৈরিতে যে পরিশ্রম হয় তার দামও ওঠে না। এসব কারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে  চলে গেছেন অন্য পেশায়। বর্তমানে ৭০০ তাঁতি পরিবার থাকলেও তারাও চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

তাঁতশিল্পে জড়িতরা জানান, তাদের পুরাতন পেশা টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়-রোজগারের বিকল্প কোনো পথ পাচ্ছেন না। কেউ ভ্যান চালাচ্ছেন, কেউ মাঠে কাজ করছেন। তাঁতকলে শ্রমিকেরা মাসিক বেতন, আবার কেউ কেউ চুক্তিভিত্তিক কাজকর্ম করেন। বর্তমানে এসব শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁতি পরিবারদের দাবি, সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ বা কোনো সহযোগিতা দিলে তারা পুনরায় বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁতকলগুলো চালু করতে পারেন। এখনো যে কয়টি তাঁতকল চালু আছে সেগুলোতে কাপড়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো। তা না হলে যে কয়টি তাঁতকল বর্তমানে চালু আছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া গ্রামের তাঁতশিল্পীদেরও একই অবস্থা। তারাও এখন পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। বন্ধ হয়ে শত শত তাঁত। রামকান্তপুর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া গ্রামের তাত মালিক মজিবর রহমান মুন্সি বলেন, “এই গ্রামে ৫ বছর আগেও ১০০ বাড়িতে প্রায় ৬০০ তাঁত ছিল। রং সুতার দাম বৃদ্ধির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই ব্যবসা থেকে প্রায় সবাই সরে গেছেন। এখন আমিসহ এই তাঁতিপাড়ায় মাত্র ৪টি বাড়িতে ১৬টি তাঁত আছে। এইগুলোও যখন তখন বন্ধ হয়ে যাবে।”

তাঁত শ্রমিক মোহাম্মদ আজাহার মিয়া বলেন, “আমরা ছোট থেকে এই তাঁতের কাজ শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে। আমার বাপ চাচারাও এই কাজ করতেন। সারাদিন কাজ করে আড়াই শ থেকে তিন শ টাকা পাই। এই দিয়ে এখন সংসার চালানো যায় না।”

রাজবাড়ী বিসিকের মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, “বিসিক কুটিরশিল্প উন্নয়নে ১৯৫৭ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাঁত শিল্প নয়, অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রেও আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা তাদেরও ঋণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি যদি তারা আসেন।”

Link copied!