• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একই স্থানে চলে পূজা-পার্বণ আর মসজিদে নামাজ


নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৩:৫৫ পিএম
একই স্থানে চলে পূজা-পার্বণ আর মসজিদে নামাজ

মসজিদে জোহরের আজান দিচ্ছেন মুয়াজ্জিন। গায়ে লাগোয়া মন্দিরে তখন সুনসান নীরবতা। দুর্গাপূজার নবমীতে পূজারিরা আসছেন মণ্ডপে,পূজা দিচ্ছেন-প্রসাদ নিচ্ছেন পুরোহিতের কাছ থেকে। অন্যদিকে মসজিদে ছুটছেন মুসল্লিরা।

ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত নড়াইল। জেলাটির মহিষখোলায় একই স্থানে মন্দিরে চলে পূজা আর মসজিদে নামাজ। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই অভ্যাসে কারও ধর্ম পরিচালনায় কোনো ছেদ পড়েনি।

একইভাবে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বাড়ির পথে রওনা হলেই শুরু হয় পূজার ঢোলের বাজনা।

নড়াইল পৌর এলাকার মহিষখোলা সর্বজনীন দুর্গামন্দির আর মসজিদ একই স্থানে। শহরের পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি এলাকার একই চত্বরের দুই পাশে আলাদা দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় মুসল্লি আর পূজারিদের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি কখনো। এ যেন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে আছে। নামাজ শেষ হলেই আবার শুরু হয় পূজার বাদ্য-বাজনা আর আরাধনা। পাশ দিয়ে চিত্রা নদী ধর্মীয় এই সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে বয়ে চলছে।

মসজিদের মুয়াজ্জিম ও খাদেম সিদ্দিুকুর রহমান বলেন, “আমাদের আজান ও নামাজের সময়সূচি তৈরি করা আছে। সেভাবে পূজা চলে, নামাজও চলে। আমরা খুবই শান্তিতে ধর্ম পালন করছি।”

মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি জামে মসসজিদের ইমান হাফেজ মো. ইনামূল হক বলেন, “কয়েক বছর ধরে এখানে মসজিদ-মন্দির রয়েছে। এ পর্যন্ত ধর্ম পালনে কোনো সমস্যা হয়নি। ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।”

মন্দিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক প্রলয় কুমার ভৌমিক বলেন, “আমাদের নদীর বাধাঘাটে আমরা পূজার সরঞ্জাম ধুয়ে পবিত্র করি। মুসলিম ভাইয়েরা একই জায়গায় ওজু করেন। এটা আমাদের সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটা যুগ যুগ থাকুক, তাই চাই।”

মন্দিরের পুরোহিত অমর কৃষ্ণ সমাদ্দার বলেন, “তাদের নামাজ আর আমাদের পূজার নাচ-গানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বরং মুসলিমরা আমাদের ওপর কেউ ঝামেলা করতে এলে তা প্রতিহত করেন। আমরা যুগ যুগ ধরে একসঙ্গেই চলছি।”

নড়াইলে এসে একই স্থানে মসজিদ আর মন্দির স্থাপনের খবর পেয়ে নবমী পূজায় পরিবার নিয়ে নড়াইলের এই মন্দিরটি পরিদর্শনে আসেন খুলনা বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিআইজি নিজামুল হক মোল্যাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, “সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের নড়াইল। এটাই বাংলাদেশের চিত্র হওয়া উচিত। তারা নিজেরাই নিজেদের সব ব্যবস্থা ঠিক করেন।”

নিজামুল হক মোল্যা বলেন, “আমি অভিভূত। নিজেই দেখলাম আজানের সময় সব কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল। আমি যেখানে যাব সেখানেই বলব ধর্মীয় সম্প্রীতির এই দৃষ্টান্তের কথা।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!