উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু অন্যবারের তুলনায় এবার শুরুর দিকে শীতের প্রকোপ কম থাকলেও গত ৮-১০ দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র এই শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া শ্রমজীবী মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠসহ চারদিক। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। ফুটপাতে ও রাস্তার পাশে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। এছাড়া শীতের কারণে গৃহপালিত গরু ছাগলের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কাপড় ও চটের বস্তা।
সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের অটোচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “রাস্তা-ঘাটে এতো কুয়াশা পড়ছে যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শীতের জন্য অটোরিকশায় কেউ উঠতে চাচ্ছে না। আয় রোজগার কমে গেছে।”
মোহাম্মদপুর গ্রামের আবুল কালাম নামের এক কৃষক বলেন, “এইদিকে এবার সূর্য্যের আলো দেখাই যায় না। এতো ঠান্ডা পড়েছে যা বলার মতো না। ক্ষেতখামারে লোকজন কাজ করতে চায় না। তাই ক্ষেতের পরিচর্যা ব্যহত হচ্ছে।”
ট্রাকচালক মাহফুজ বলেন, “পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে গাড়ি নিয়ে আসতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে। বিশেষ করে রাতে রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটেও কিছু দেখা যায় না। খুব ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের।”
এদিকে তীব্র শীতের কারণে জেলার শিশুদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ঠান্ডাজনিত রোগ। ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
রাণীশংকৈল থেকে ছেলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, “ঠান্ডার কারণে হঠাৎ করে ছেলেটার কফ সর্দিতে বুক ঘেরঘের করছে। তাই কালকে হাসপাতালে ভর্তি করাইছি।”
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলার ৫৪ টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৪৫০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতে সরকারের পাশাপাশি তিনি বিত্তশালীদেরও শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।