গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাইজকান্দি থেকে আড়ুয়াকান্দী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক ও খালের ওপর তিনটি ব্রিজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন না করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) অভিযোগের ভিত্তিতে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সকালে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাইজকান্দি থেকে আড়ুয়াকান্দী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক ও খালের ওপর তিনটি ব্রিজ নির্মাণকাজ হাতে নেয় গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ। প্রতিটি ব্রিজে ১২ মিটার করে সংযোগ সড়ক থাকার কথা থাকলেও ব্রিজটি না করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। ব্রিজে সংযোগ সড়ক না থাকায় ৯ বছর ধরে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মই বেয়ে গ্রামবাসীকে উঠতে হচ্ছে সেতুতে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট ধানের বস্তা মাথায় নিয়ে মাইজকান্দি পশ্চিম পাড়া ব্রিজ পার হচ্ছিলেন স্থানীয় দিনমজুর মুরাদ আলী। এ সময় সেতু থেকে পা পিছলে পড়ে যান তিনি। পড়ে তিনবার অপারেশন করার পর তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, “মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) আমরা সরেজমিনে গিয়েছিলাম। বুধবার প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর জেলা পরিষদে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পরে কমিশনের অনুমতিক্রমে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা রুজু করা হবে।”
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. সোহারাব হোসেন বলেন, “প্রকল্পটির বরাদ্দ ছিল মোট ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সংযোগ সড়কসহ ৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকার কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া সেতুর কাজও করা হয়েছে নিম্নমানের। এখানে কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।“
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রকৌশলী (অব.) মনিরুল ইসলাম বলেন, “কাজ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী বদলি হয়ে যাবে বলে বিলটি পাস করার জন্য খুব চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি অস্ত্র নিয়েও মাঝেমধ্যে অফিসে এসে ভয়ভীতি দেখাতেন। কাজের মূল ঠিকাদার ছিলেন হাবিবুর রহমান, কিন্তু কাজটি করছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম। ওই সাইফুল ইসলাম অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে বিলটি পাস করিয়ে নেন।”
মনিরুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু আওয়ামী লীগের আমল ছিল তাই বাঁচার স্বার্থে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী স্যার বলেন ‘বিল দিয়ে দাও, পরে সংযোগ সড়ক করে দেবে’। যার কারণে আমি বিলে স্বাক্ষর করেছি।”