• ঢাকা
  • বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩০, ২ শাওয়াল ১৪৪৬

প্রস্তুত শোলাকিয়ার ময়দান, ১৫ বছর পর ইমামতি করবেন ছাইফুল্লাহ


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ১১:১০ এএম
প্রস্তুত শোলাকিয়ার ময়দান, ১৫ বছর পর ইমামতি করবেন ছাইফুল্লাহ
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ছবি : সংগৃহীত

উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন ও বৃহৎ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।  সাজানো হয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এতে ইমামতি করবেন ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানে। এটি হবে ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত। ঈদের জামাত সকাল ১০টার দিকে শুরু হবে।

ইতোমধ্যে ঈদ জামাতকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি স্পেশাল ট্রেন আসা-যাওয়া করবে।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অন্য সব মাঠের মতো নেই কোনো সামিয়ানা টাঙানোর কাজ। এটিই এই ঈদগাহ মাঠের অন্যতম বৈশিষ্ট। খোলা আকাশের নিচে যুগ যুগ ধরে এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঈদের জামাত।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া মাঠের সভাপতি ফৌজিয়া খান  জানান, ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মুসুল্লিদের সুবিধার জন্য ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে শোলাকিয়া স্পেশাল নামের দুটি বিশেষ ট্রেন জামাতের আগে ও পরে চলাচল করবে।

জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চার স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি, মাঠে থাকবে র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও সাদা পোশাকের পুলিশ। এছাড়া মাঠের বিভিন্ন প্রবেশ পথে থাকছে আর্চারি  ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।

নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে।  ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের জায়নামাজ, ঘড়ি ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কিছু বহন করা যাবে না।

শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি দেখতে মাঠ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, র‍্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি নাঈমুল হাসান ও পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী। এ সময় তারা মাঠের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে পৃথক পৃথক ব্রিফিংয়ে মিলিত হন।

মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক প্রভাব এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের মুখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তাকে সরিয়ে দেন এবং তার মোতাওয়াল্লীর অধিকারও হরণ করা হয়।  

ওয়াকফ দলিলের তোয়াক্কা না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। সে সময় এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আত্মগোপন করেন। তাকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় সংঘটিত একটি হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহর আগে তার বাবা দেশ বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা এ কে এম নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহে অবৈতনিক ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, সুদূর ইয়ামেন থেকে ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের উদ্দেশ্য এদেশে আসা শোলাকিয়া জমিদার বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সূফী সৈয়দ আহমেদ (র.)’র হাতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গোড়াপত্তন হয়। তার ইমামতিতে ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের ঈদের জামাতে শোলাকিয়ায় সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। উচ্চারণ বিবর্তনের ফলে এ ঈদগাহ ময়দানটি এখন শোলাকিয়া নামেই সমধিক পরিচিত। তারপর থেকে স্মরণকালের প্রতিটি ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ছয় থেকে সাত লাখ দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ঢল নামে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না- এমনটিই প্রত্যাশা আয়োজকদের।
 

Link copied!