বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর দলটির কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। এরই মধ্যে আত্মগোপনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানরা। জনপ্রতিনিধিরা তাদের কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সনদ ও জন্ম—মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক সময়, সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
তবে কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থেকেই কিছু কিছু সেবা প্রার্থীদের স্বাক্ষরিত কাজ করে যাচ্ছে বলে গেছে। তাদের দাবি দুর্বৃত্তদের হামলাসহ নিরাপত্তা শঙ্কায় কর্মস্থলে যাচ্ছেন না উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর আওয়ামীপন্থী চেয়ারম্যানরা।
আত্মগোপনে যাওয়া জনপ্রতিনিধরা হলেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা, মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগম, পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ, ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আরিফ হোসেন, সদর উপজেলার পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ রাজীব, ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া আফরিন খানম লোপাসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেক জনপ্রতিনিধিরা।
জানা যায়, জেলায় ১২০টি ইউনিয়ন, ১১টি পৌরসভা ও ১২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনেক প্রতিষ্ঠান। সরকার পতনের আগে নিয়মিত কার্যালয়ে এলেও সরকার পতনের পর থেকে পরিষদের আসছেন না জেলার বিভিন্ন উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র ও ইউনিয়নের আওয়ামী লীগপন্থী জনপ্রতিনিধিরা।
এ পরিস্থিতিতে পরিষদে সেবা পেতে দিনের পর দিন ঘুরছেন সাধারণ মানুষ। পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। তবে ধনবাড়ী, কালিহাতী, গোপালপুর, মির্জাপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা পরিষদে যাচ্ছেন। ঘাটাইল পৌরসভার মেয়রও পৌর কার্যালয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে রোববার (১৮ আগস্ট) সখীপুর উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান অফিসে এসে তড়িঘড়ি করে স্বাক্ষর করছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিকে কাজে দেখা গেছে। এদিকে গত ৬-৭ দিন ধরে অফিস করতে দেখা গেছে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ভাইস চেয়ারম্যানদের।
স্থানীয়রা জানান, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সেবা নিতে আসা রাব্বি মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “চেয়ারম্যানরা তাদের কার্যালয়ে সঠিক সময় উপস্থিতি না থাকায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তবে চেয়ারম্যানরা কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলে সেবাগুলো তাৎক্ষণিক সুবিধা পাওয়া যেত। তাই প্রশাসনের কাছে জনসাধারণের ভোগান্তি যেন না পড়তে হয় তা দ্রুত সমাধান চাই।”
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের রাশেদ মিয়া বলেন, “সরকার পদত্যাগের পরের দিন থেকে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। জনপ্রতিনিধিরা পরিষদে না থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছি না। কবে তারা পরিষদে আসবে তাও কেউ বলতে পারছে না। এ নিয়ে আমরা ভোগান্তিতে রয়েছি।“
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নিরাপত্তাজনিত কারণে কয়েকদিন পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়া হয়নি। তবে জনগণ যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সকল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি এবং এখন নিয়মিত পরিষদে যাচ্ছি।”
ভূঞাপুর পৌরসভা মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, “আমার বাসা-বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে অফিস যাওয়া হয়নি। নিরাপত্তা পেলে নিয়মিত অফিস করব।”
ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান মোছা. নাগির্স বেগম বলেন, “দু’একদিন অফিসে গিয়েছি। কিন্তু বাধার কারণে অফিস করা হয়নি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে নিয়মিত অফিস যাব।”
তবে যেসব জনপ্রতিনিধি তাদের কার্যালয়ে যাচ্ছেন না তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শিহাব রায়হানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেনি।