• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেএনএফের সঙ্গে সংলাপ বন্ধের ঘোষণা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির


বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
কেএনএফের সঙ্গে সংলাপ বন্ধের ঘোষণা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ওপর ক্ষুব্ধ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সংগঠনটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ ও আলোচনায় না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।  

এ ছাড়া সম্মেলনে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে আলোচনা এবং তাদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বর্তমান অবস্থাও তুলে ধরেন।

ক্য শৈ হ্লা লিখিত বিবৃতিতে বলেন, গত ২ এপ্রিল রুমায় কেএনএফ পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজিদের ওপর হামলা, সরকারি কর্মকর্তা ও পথচারীদের জিম্মি, অর্থ লুটের উদ্দেশ্যে সোনালী ব্যাংকে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে নেয়। ৩ এপ্রিল থানচি উপজেলায় স্থানীয়দের জিম্মি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও দুটি ব্যাংক লুট করার মতো হীন কাজ করে। তাদের বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছরের ২৯ মে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের উপস্থিতিতে জেলার অরুণ সারকী টাউন হলে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৯ জুন স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে কয়েক দফা ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পর উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সরাসরি সংলাপে বসার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

তিনি বলেন, গত বছরের ৫ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৫ মার্চ  দু’দফা সরাসরি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সংলাপে কেএনএফ এর সশস্ত্র কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক সম্পাদিত হয়। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। কমিটির তরফ থেকে এ ব্যাপারে বারবার অবগতি করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। বরং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়বাসীদের ওপর হামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি চালিয়ে যায়। অতি সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তীব্রভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চলমান সব ধরনের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এমতাবস্থায় এ কমিটি মনে করে, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কেএনএফ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সংলাপ করার সব ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

বিধায় আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা জোরদারকরণ, রাষ্ট্রের সম্পত্তির সুরক্ষা প্রদান এবং অপহৃত সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে নিঃশর্তভাবে সুস্থ ও নিরাপদে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

শান্তি আলোচনা চলাকালে কেএনএফ এর এ ধরনের অবস্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির গৃহীত উদ্যোগ ও কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে কিনা?এমন প্রশ্নের উত্তরে এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার। এর মধ্যে সাধারণ বম জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে প্রশাসনিকভাবে সকল সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরেও এ ধরনের ঘটনায় আমরা বিস্মিত।

পুনরায় কি এই শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘটনার পর কেএনএফ এর লিয়াজোঁ কমিটির সব সদস্যের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম, সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, পাহাড়ে কেএনএফের অপতৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১৮ জুন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উদ্যোগে গঠিত হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ নভেম্বর বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম মুখোমুখি বৈঠকের অনুষ্ঠিত হয় এবং চলতি বছরের ৫ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) উচ্চ পর্যায়ের নেতারা।

তবে শান্তি আলোচনা, সমঝোতা হওয়ার পরেও পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত না রেখে একের পর এক হামলা, চাঁদাবাজি, গুম, খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।

Link copied!