দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে জেলার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সকাল ৯টা দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
হিমালয়ের খুব কাছাকাছি জেলা হওয়ায় পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে খুব সহজেই বয়ে যায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমালয়ের হিম বায়ু তাপমাত্রা কমে যেতে মূল ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্।
এসব এলাকার ওপর দিয়ে শীতল হাওয়া অনবরত বয়ে যাওয়ায় কুয়াশা কমলেও শীতের তীব্রতা কমেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিছুদিন ধরে পঞ্চগড় ও এর আশপাশের এলাকায় মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে।
এ ছাড়া শীতের তীব্রতার কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। ফলে কষ্টে দিনাপাত করছেন তারা।
ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু জনজীবন। শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় তাদের আয় উপার্জনে ব্যাঘাত ঘটছে। আবার একটু কাজ করতেই নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। শীত নিবারণের জন্য পুরাতন মোটা কাপড়ের (হকার্স মার্কেট) দোকানগুলোতে ভিড় করছে মানুষজন। এই শীত ও ঘন কুয়াশা কৃষকদেরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে থাকা আলু ও টমেটো খেতে দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। আবার বোরো চারাও ঠিকভাবে অঙ্কুরোদগম হচ্ছে না।
মোটা কাপড়ের শার্ট আর ফুলপ্যান্ট পরে শনিবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকায় নিজের ভুট্টাখেতে নিড়ানি দিতে লাঙল টানছিলেন আক্তার আলী (৩৮)। আলাপকালে তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এত কুয়াশা, ১০ হাত দূরোত দেখা যায় না। আর মাটিখান তকা (থেকে) বরফের মতো ঠান্ডা উঠোচে। পাওলা অবশ হয়া যাছে। কিন্তু কী করিবেন, নিজের কৃষিকাজ তো করিবায় নাগিবে। আবাদপানি না কিরলে খামো কী?”
অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড়ের প্রায় ২০ হাজার পাথর শ্রমিক। নদীর বরফ শীতল জলে নেমে পাথর তুলতে পারছেন না তারা। বরফের মতো ঠান্ডা পানিতে নেমে পাথর তুলতে হয়। কিন্তু এখন তীব্র শীতের কারণে তা করতে পারছেন না তিনি। যেদিন সূর্যের তেজ একটু বেশি থাকে, সেদিন নদীতে নামতে পারেন। তা-ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পানি থেকে উঠে পড়তে হয়। আর অন্যদিনগুলো বসেই থাকতে হয়।