নাটোরের সিংড়া উপজেলায় চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটায় ওসির ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন স্থানী সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সম্প্রতি একটি দোকানে চুরির ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (১৩ আগস্ট) দিনব্যাপী গণশুনানির আয়োজন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
জানা যায়, সিংড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজ বাড়িতে এলাকার মানুষের সঙ্গে গত ৫ আগস্ট সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বর্ণা রানি ঘোষ দম্পতি এসে তাদের দোকানে হওয়া চুরির ঘটনায় মামলা নিতে দেরির অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ওসির নিষ্ক্রিয়তায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী ফোন করে ওসিকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে উপস্থিত অনেকে ওসির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করেন। তখন প্রতিমন্ত্রী বর্ণাসহ ভুক্তভোগী সবার অভিযোগের জবাব দিতে ওসিকে নিয়ে গণশুনানি আয়োজন করেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিংড়া কোর্ট মাঠের উন্মুক্ত মঞ্চে উপস্থিত হন প্রতিমন্ত্রী পলক। শুরুতেই বক্তব্য দেন চুরির শিকার ভুক্তভোগী বর্ণা রানি ঘোষ। তিনি জানান, ঋণের টাকায় গড়ে তোলা নিজের দোকানে গত ১৮ জুলাই রাতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। পরদিন সিংড়া থানায় গেলে মামলা না নিয়ে অভিযোগ নেন ওসি মিজান। কিন্তু অভিযোগ তদন্ত বা অপরাধী গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেননি তিনি।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী পলক ওসি মিজানকে চুরির ঘটনার পর তার নিষ্ক্রিয়তার কারণ জানতে চান। জবাবে ওসি বলেন, চোর শনাক্ত করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন এবং আশপাশের থানাগুলোতে ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হয়েছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার উচিত ছিল একজন চৌকস অফিসারকে চোর ধরার দায়িত্ব দেওয়া। আপনি তা না করে প্রথমে মামলাই নিতে চাননি।”
প্রতিমন্ত্রী ওসিকে প্রশ্ন করেন, “আমি প্রতিমন্ত্রী কেন আপনাকে মামলা নেওয়ার জন্য ফোন করব? আমার বাড়িতে আমার এলাকার মানুষ এসে চোখের পানি ফেলতে পারে। আপনি ওসি, আপনার সামনে চোখের পানি ফেললে আপনার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না? এটা আপনার দায়িত্ব না? আপনি থানার ওসি, আপনার কি জানা নেই, একটা অপরাধ ঘটার পর আশপাশে কারা ছিল তা কীভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে বের করতে হয়?”
প্রতিমন্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি অন্যান্য ঘটনায় নিজের সফলতার কথা শোনাতে গেলে তিনি থামিয়ে দেন।
এ সময় সম্প্রতি সিংড়া থানা এলাকাগুলোতে চুরি, ছিনতাই, মাদক কেনাবেচাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের অধিকাংশই পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী, চাঁদাবাজ ও চলনবিলের খাল-বিল দখলকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়।
শুনানিতে উপস্থিত শাহানাজ বেগম, আনোয়ারা বেগম, শামসুন্নাহার ও মনোরঞ্জন চাকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন। থানায় এসব বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে ওসি গুরুত্ব দিতেন না। আজকের শুনানিতে প্রতিমন্ত্রী সময় নিয়ে তাদের কথা শুনেছেন। এখন তারা সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম বলেন, “সিংড়ার ওসির ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ওসি জড়িত থাকলে ছাড় পাবেন না। একই সঙ্গে সিংড়ার আইনশৃঙ্খলাজনিত যত সমস্যা আছে, সব সমাধান করা হবে। মানুষ নির্ভয়ে পুলিশের কাছে আসবে। কেউ বাধা দিলে বা কথা না শুনলে সরাসরি আমাকে জানাবেন।”
গণশুনানির সমাপনী বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যত দিন ক্ষমতায় আছে, জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা সবাই করেন না, কিছু কর্মকর্তা করেন। আমরা তাদের কঠোর বার্তা দিতে চাই। জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি বিচার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যান, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ওহিদুর রহমান, পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ।