নড়াইলের হিজলডাঙ্গা গ্রামে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পাগল চাঁদের মেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিনে এই মেলার আয়োজন করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন।
জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা বিশ্বাস করেন পাগলের মাজারে মানত করে পাগলকে সন্তুষ্ট করতে পারলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। এই উদ্দেশ্যে পাগলের মাজারে বাতাশা ছুড়ে মেরে পাগলকে সন্তুষ্টি করতে ব্যস্ত ভক্তরা। স্থানীয়রা এ মেলাকে পাগল চাঁদের মেলা বলে অভিহিত করে থাকেন। আধ্যাত্মিক সাধু পাগল চাঁদ স্মরণে প্রায় একশ বছর ধরে এই মেলা চলে আসছে বলে জানান মেলা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার রায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হিজলডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় এবার প্রায় দুইশতাধিক দোকান রয়েছে। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই মেলা। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মেলে এই মেলায়। বিভিন্ন দোকানে আধুনিক খেলনার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। নাগরদোলায় ওঠার জন্য শিশুরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পান থেকে শুরু করে পিতলের বাসন আর বাশ-বেতের তৈরি ধামা, সের, পাইকে সনাতন সব দ্রব্যাদি মেলে এই মেলায়। বাহারী পান, পাপড়, তিলের খাজা, কদমা, টক-মিষ্টি আচার এবং বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন কিনে বাড়িতে ফিরে যেতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাগল চাঁদ আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সারাদিন দেখা নাই অথচ রাতে হঠাৎ কোনো এক ভক্তের সামনে এসে হাজির হয়ে খাবার চাইতেন। কেউ কেউ সেধে তাকে খাওয়াতে পারতেন না। আবার কোনো বাড়িতে গিয়ে তিনি নিজেই চেয়ে খেতেন। পাগল বাবা যাকে পছন্দ করতেন তার মনের ইচ্ছা ফলে যেত। তার বিচরণ ছিল সর্বত্র। এই সাধু পুরুষ নড়াইলের মুলিয়া, শেখহাটি, হিজলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন। আর ভক্তরা তার সেবা করার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। তিনি মারা যাওয়ার সময় হিজলডাঙ্গা গ্রামের এক ভক্তের বাড়িতে এসে শুয়ে বললেন, ‘আমাকে আর ডাকিস না’ এরপর তিনি মারা যান। সেই থেকে এই গ্রামে পাগল চাঁদের পূজা শুরু, তা থেকে মেলা। মেলায় হাজারো ভক্ত আসেন, পাগলের মাজারে পূজা দিয়ে মানত সেরে তারা কেনাকাটা করেন।
মেলায় ঘুরতে আসা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী মোহনা সাহা বলেন, “এবার প্রথম এ মেলায় এসেছি। মেলায় ঘুরে খুব আনন্দ লাগছে।”
মেলায় আসা দর্শনার্থী বৃষ্টি বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবছর এই মেলায় আসি। মেলায় এসে প্রথমে পাগল চাঁদের মাজারে পূজা করে মানত করি। তারপর রাতভর মেলায় কেনাকাটা করি, গান-বাজনা শুনি।”
মেলার আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা মুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ অধিকারী জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। পাগল চাঁদকে আধ্যাত্মিক সাধক মনে করে সনাতন ধর্মালম্বীরা এখানে এসে থাকেন। পৌষ মেলায় আনন্দ পেতে অন্য ধর্মালম্বীদেরও আগমন ঘটে। স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের দোকানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীরা আনন্দ বিনোদন শেষে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরতে পারে সেলক্ষ্যে মেলা প্রাঙ্গনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।