• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

একের পর এক ভাঙছে বাঁধ, প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম
একের পর এক ভাঙছে বাঁধ, প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা

কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়ছে। এতে সড়ক ডুবে যাচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। দীর্ঘ হচ্ছে বানভাসিদের তালিকা।

রোববার (৭ জুলাই) সকালে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার আকরাম মাস্টারের বাড়ির সামনে এলজিইডি ক্ষুদ্র ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নির্মিত একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। একইদিন ভোরে মুড়িয়ায় এক জায়গায় বাঁধ ভাঙার উপক্রম হলে এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে সংস্কার করেন। 

এর আগে শনিবার একই ইউনিয়নের তেলিয়ানীতে একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে কচাকাটা থেকে আয়নালের ঘাটগামী পাকা সড়ক উপচে বিস্তৃণ এলাকায় পানি ঢুকেছে ।

তেলিয়ানীর ওছমান গণি জানান, সকাল ১১টার দিকে অস্বাভাবিকভাবে দুধকুমারের পানি বাড়ে। ক্রমে বাড়তে থাকে এর গতি। ধীরে ধীরে মাটি ক্ষয়ে পানি প্রবেশের অংশ প্রশস্থ হয়ে গেছে। সেখান দিয়ে পানি ঢুকে কিছুক্ষণের মধ্যে এখন তার উঠানে হাঁটুসমান পানি। ক্রমে পানির উচ্চতা বাড়ছে। 

একই কথা স্থানীয় ইউপি সদস্য আবেদ আলীরও। তিনি বলেন, পানি যেভাবে ঢুকছে, তাতে বিকেলের মধ্যে তেলিয়ানীর অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি উঠে যেতে পারে। 

যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙেছে তার আশেপাশের গ্রামগুলোর অবস্থাও একই। 

অপর দিকে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের আকরাম মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানীয় সরকার বিভাগের ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ মিটার জায়গা ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকতে থাকে তিনটি গ্রামে।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি জানান, শনিবার মিয়াপাড়ায় বেড়ি বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে যায়। রোববার তেলিয়ানীতে বাঁধ উপছায়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ফলে নতুন করে অনেক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।

টানা ৭ দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায়  দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার ৯টি উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ প্রায় ৬০টি ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। 

প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে, গত দুদিনে হুহু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু ভূমিতে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ৫ দিন ধরে নৌকায় স্ত্রী, ছেলে ও ২ নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের গুজিমারী গ্রামের শামসুল আলম। তিনি জানান, ঘরের আসবাবপত্র, চাল-ডাল, কাপড়-চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্র যাতে হারিয়ে না যায়, এজন্য নৌকায় আশ্রয় নিয়েছি। সারাদিন বৃষ্টির কারণে কিছু রান্নাবান্নাও করতে পারছি না। খুব সমস্যায় আছি।

একই উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ার মনসুর আলী জানান, এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নিতে আসে নাই। বৃষ্টির পানিতে চুলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুপুর গড়িয়ে গেলেও তবু পেটে কিছু পরেনি।

বাঁধ ভাঙার বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকাবাল রাজিব বাঁধ ভাঙার বিষয়ে বলেন, “এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানাননি, খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারব।”

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  রাকিবুল হাসান জানান, দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে। সেগুলো বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার কোনো খবর তাদের কাছে নেই। শনিবার যেটি ভেঙেছে সেটি একটি পুরাতন সড়ক। তারপরেও সেটি রক্ষার্থে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের নজরে দেওয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেব।” 

Link copied!