রমজান মাস এলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষক, শ্রমিকসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্টে দিনযাপন করতে হয়। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে রমজান মাসে লাভ ছাড়াই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন ওমর ফারুক নামে এক মুদি ব্যবসায়ী।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর বাজারে আবদুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এখান থেকে তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে পেরে হাসি ফুটছে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মুখে।
জয়নগর বাজার সূত্রে জানা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে কৃষক, শ্রমিকসহ গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে ওমর ফারুক খান তার দোকানের ১২টি পণ্য বিক্রি করছেন বিনা লাভে। এসব পণ্যের সবগুলোই রমজানে গৃহস্থ্যের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়। বাজারের অন্য সব দোকানের তুলনায় মূল্য কম হওয়ায় ক্রেতারা স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করছেন।
আবদুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে রোজা উপলক্ষে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা, চিড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিনি ১৩৬ টাকা, আখের গুড় ১১১ টাকা, বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, লাচ্ছা সেমাই ১২০ টাকা, খোলা সেমাই ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কনডেন্স মিল্ক ও খেজুর বিক্রিও করছেন লাভ ছাড়াই। এসব পণ্যের মূল্য তালিকা তিনি তার দোকানে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। মূল্য তালিকা দেখে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ হাসিমুখে পণ্য ক্রয় করছেন।
জলিল উদ্দিন নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রমজান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমাদের মতো গরীব মানুষের এই কারণে অনেক কষ্ট হয়। সেখানে ওমর ফারুক ভাই রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় ৫ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করছেন। তার দোকান থেকে আজ চিনি, ছোলা, তেল কিনেছি। রোজা রেখে ওমর ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, তার মতো যদি অন্য ব্যবসায়ীরাও এই চিন্তা করতেন, তাহলে আমরা সুখে শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।”
পণ্য কিনতে আসা ইব্রাহিম খান বলেন, “ফেসবুকে দেখে আসছি। দুই লিটার তেল আর গুড় কিনলাম। কত কমে কিনলাম সেটা বড় কথা না, এই ছেলে যে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কম দামে পণ্য বিক্রি করছে এটাই ভালো লাগছে। বাজারের অবস্থা তো ভালো না। মানুষ বড় কষ্টে আছে।”
কলেজছাত্র সজিব হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “লোকমুখে শুনেছি ওমর ফারুক ভাইয়ের দোকানে কম দামে রোজার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এরপর আমি তার দোকান থেকে রমজানের মালামাল কিনেছি। মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাংলাদেশেও কম দামে পণ্য বিক্রির উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ওমর ফারুক ভাই।”
দোকান মালিক ওমর ফারুক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “জয়নগর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই ক্রয়মূল্যে রমজানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছি। যে দামে আমার কেনা, সেই দামেই বিক্রি করছি। এসব মানুষ কম দামে পণ্য কিনতে পেরে যখন হাসি দেয়, তখন আমার বুকটা আনন্দে ভরে যায়।”
ওমর ফারুক আরও বলেন, “ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিল একজন, এরপর থেকেই আমার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। দোয়া করবেন, আমি যেন পুরো রমজান মাস জুড়ে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয় মূল্যে বিক্রি করে এসব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।”
জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এস্কান্দার খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওমর ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যেই বিক্রি করছে সে। ক্রয়মূল্যে বিক্রি করায় বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় তার দোকানের পণ্যের মূল্য অনেকটাই কম। এতে এলাকার সাধারণ ক্রেতারা আনন্দ সহকারে পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে আমি ধন্যবাদ জানাই।”
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওমর ফারুক নামে জয়নগর বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্রয়মূল্যে রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করছেন। আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্যান্য ব্যবসায়ীরা যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করে তাহলে সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।”