ফেনী জেলা কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন, এমন অভিযোগ এনে আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদের মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন বাবুল আক্তার।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে এ আবেদন করা হয়। এ ব্যাপারে শুনানির জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই দিন পিবিআই প্রধান বনজ কুমারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের করা মামলার আবেদনের শুনানিও হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালতে তদন্তের আবেদনের বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, “বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পর গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন কারাগারে প্রবেশ করে তার কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালান। ওই সময় তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হয়। এ ঘটনার তদন্ত ও বাবুল আক্তারের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফেনীর জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, “সেদিন ওসি নিজাম উদ্দিনের কারাগারে ঢোকার দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। জেল কোড অনুসারে থানায় কর্মরত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনোভাবেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং আদালতের লিখিত অনুমতি ছাড়া কারাগারে ঢুকতে পারেন না। জেল কোড অনুসারে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাবুল আক্তারকে মানসিক চাপে রাখতেই এ ধরনের কাজ বারবার করা হচ্ছে। কারাগারের অভ্যন্তরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রবেশ করেন কীভাবে?”
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, বাবুল আক্তারের পক্ষে পিবিআই প্রধানসহ ছয়জনকে আসামি করে এবং সোমবারের রিটসহ উভয় আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।”
এদিকে বাবুল আক্তারের কক্ষে ঢুকে তল্লাশির অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, “আমি ডাকাতি মামলার একজন আসামির বিষয়ে কথা বলতে জেল সুপারের রুমে গিয়েছিলাম। কোনো কয়েদির রুমে ঢোকার তো প্রশ্নই আসে না। বাবুল আক্তার স্যারের আইনজীবীর অভিযোগটি ভিত্তিহীন। আর বাবুল আক্তার স্যার যে ফেনী কারাগারে আছেন, সেটা আমি আগে জানতামই না। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানলাম।”
ফেনী জেলা কারাগারের সুপার মো. আনোয়ারুল করীমও বাবুল আক্তারের কক্ষে তল্লাশির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কারাভ্যন্তরে বাবুল আক্তারের কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে, অভিযোগটি সত্য নয়। কারাগারে কারারক্ষীরা ছাড়া অন্যদের প্রবেশের কোনো নিয়ম নেই। পুলিশ নিয়মিত কারাগার থেকে আসামি নিয়ে যায় এবং দিয়ে যায়।”
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, “ফেনী মডেল থানার ওসির কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। ফেনী কারাগারে বাবুল আক্তারের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে পিটিশনের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে আদালত যে আদেশ দেবেন, তাই হবে।”
এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের অভিযোগে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়। স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাবন্দি থাকা পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পক্ষে এ আবেদন করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী সাজ্জাদ। আবেদনে বাবুল আক্তারকে গত বছরের ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা কার্যালয়ে হেফাজতে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ওই ঘটনার পরদিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে একটা মামলা করেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই। সে সময় বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানান তারা।
তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ১২ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। একই দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১২ মে বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।