রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নে চার বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ইব্রাহিম হোসেন (৬৫) এলাকায় ‘সাদা বাবা’ নামে পরিচিত। ঘটনার পর থেকে প্রায় সাত মাস ধরে তিনি পলাতক।
ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ এ ঘটনায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি; বরং অভিযুক্তকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পরিবারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিশুটির মা জানান, ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট সকালে ওই ঘটনা ঘটে। তিনি মেয়েকে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে বাইরে পাঠান। শিশুটি পাশের বাড়ির অভিযুক্ত ইব্রাহিমের নাতির সঙ্গে খেলছিল। এ সময় ইব্রাহিম তাকে মধু দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর নিজের নাতিদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন করেন।
শিশুটির কান্না শুরু করলে শুনে অভিযুক্তের নাতিরা দৌড়ে আসে। পরে বাড়ি ফিরে শিশু তার মাকে এ ঘটনা জানায়। অভিযুক্তের নাতিও অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করে এবং স্থানীয় নারীরা যৌন নিপীড়নের আলামত দেখতে পান। পরে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে ওই দিনই ইব্রাহিম পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট পবা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করের শিশুর পরিবার। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শিশুর মা বলেন, আমরা মামলা করেছি কিন্তু এত দিন হয়ে গেল পুলিশ তাকে ধরেনি। বরং ওসি আমাদের বলেছেন, আমরা যেন নিজেরা তাকে খুঁজে বের করে থানায় জানাই।’
ভুক্তভোগী পরিবারের এক প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, ‘ইব্রাহিম প্রথমে অস্বীকার করেছেন। তিনি আমাদের কাছে দাবি করেছেন যে শিশুটিকে পিঁপড়া কামড় দিয়েছিল, তাই পোশাক খুলেছিলেন। কিন্তু আশপাশের নারীরা প্রাথমিকভাবে যৌন নিপীড়নের আলামত নিশ্চিত করেছেন।’ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আগেও চুরি ও প্রতারণার অভিযোগ ছিল বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী শিশুর দাদা বলেন, ‘ইব্রাহিমের চরিত্রগত সমস্যা আছে। সে নানা কাজে অপরাধী। সে প্রায়ই নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।’
এ বিষয়ে ইব্রাহিমের স্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার সময় সে বাড়িতে ছিল না এবং কোরআনের শপথ করে সে নির্দোষ বলে দাবি করেছে।’
ইব্রাহিমের মেয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল, যা আমরা দিতে পারিনি বলেই মামলা করা হয়েছে।’
অন্যদিকে এত দিন ধরে ইব্রাহিম নিখোঁজ থাকলেও তার পরিবারের কেউ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেনি। পুলিশ বলছে, তার নিখোঁজ থাকাই মামলার অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরে ওসি মো. মনিরুল ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি এবার সুর পাল্টে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছি। কিন্তু এখনো তার কোনো সন্ধান পাইনি। যদি অভিযুক্ত নিখোঁজ থাকে, তাহলে এই মামলা আদালতে স্থানান্তর করা হবে। আমরা অতি দ্রুত চার্জশিট দেব।’
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘এটা নিয়ে আপনাদের অতিরঞ্জিত কিছু করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তা ছাড়া বাদীপক্ষ যদি আসামিকে খুঁজে দেয়, তাহলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে আসবে।’